ভারতের ভৌগোলিক সীমানাকে নতুন নামে পরিচিত করালেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর প্রধান মোহন ভাগবত। সাধারণত ভারতকে ‘আসমুদ্রহিমাচল’ নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ ভারত মহাসাগর থেকে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ড। তবে রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাগবত বলেন, ‘আসেতুহিমাচল’। এখানে ‘সেতু’ বলতে তিনি যে ‘রামসেতু’-র দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
রবিবার পূর্ব বর্ধমানের তালিতে ‘মধ্যবঙ্গ প্রদেশের একত্রীকরণ সমাবেশ’-এ ভাষণ দেন ভাগবত। এই সমাবেশ ছিল তাঁর পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘতম সফরের একমাত্র প্রকাশ্য কর্মসূচি। ভাগবত বলেন, “ভারত শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনধারার মধ্যে এক অদৃশ্য বন্ধন রয়েছে, যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। ভারতের বিভিন্ন ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সম্প্রদায় ও ধর্ম থাকলেও, মূলত সকলেই এক অভিন্ন সংস্কৃতির অংশ।” তাঁর মতে, এই অভিন্ন ‘স্ব-ভাব’-এর নামই হিন্দুত্ব।
ভাগবতের এই মন্তব্য আরএসএসের সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘আসেতুহিমাচল’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে তিনি রামায়ণের পৌরাণিক বিশ্বাস ও বর্তমান ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে এক সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন করেছেন। রামসেতুর প্রসঙ্গ এনে তিনি ভারতের দক্ষিণতম অংশের সঙ্গে উত্তরতম অংশের একতা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
তবে ভাগবতের ভাষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ভারতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং এর মোকাবিলা কৌশল নিয়ে তাঁর বক্তব্য। প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু না বললেও, তিনি কৌশলগত বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মহাভারতের এক কাহিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের শক্তি কোথায়, তা বুঝতে হবে এবং কোন ফাঁদে না পা দিয়ে সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে হবে।” অনেকে মনে করছেন, এটি বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে পরোক্ষ বার্তা।
ভাগবতের বক্তব্য যে আরএসএসের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে, তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “ভারতের সামনে অনেক সমস্যা রয়েছে, তবে সঠিক কৌশলে এগোতে পারলে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব।” এই বক্তব্য ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক নীতির ভবিষ্যৎ দিশা নিয়েও একপ্রকার ইঙ্গিত বহন করছে।