আশংকাকে সত্যি করেই ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা সোমবার এক ধাক্কায় স্থগিত করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। কিয়েভের ওপর শান্তি আলোচনায় সম্মত হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বলা হচ্ছে ট্রাম্প যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চান, আর সে কারণেই ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা বন্ধের পথে হাঁটলেন।
বিরোধী শিবির বা কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অবিলম্বে অবৈধ ও বিপজ্জনক বলে নিন্দা করেছেন। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট গ্রেগরি মিক্স বলেন, “আমার রিপাবলিকান সহকর্মীরা, যারা পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলেছেন এবং ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদের ট্রাম্পের এই অবৈধ সহায়তা স্থগিতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত।”
এক রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, আপাতত ইউক্রেনে সমস্ত মার্কিন সহায়তা স্থগিত রাখছে আমেরিকা। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ট্রাম্প মনে করছেন যে ইউক্রেনের নেতারা শান্তির প্রতি সদিচ্ছার প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছেন, ততক্ষণ এই সহায়তা আমেরিকা স্তব্ধ রাখবে। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি জেলেনস্কির এই প্রতিরোধ বেশিদিন মেনে নেবেন না। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় নেতার উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য আরও কৃতজ্ঞ হওয়া। হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কি যদি মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তি না করেন, তাহলে তিনি বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না।” নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে এই সহায়তা স্থগিতের ফলে ইউক্রেনের জন্য পাঠানো কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
যদিও জেলেনস্কি সোমবার জানিয়েছেন যে তিনি যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে চান। তবে তিনি রাশিয়ার সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল থেকে শুরু করে ২০২২ সালে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ পর্যন্ত রাশিয়া কখনোই প্রকৃত অর্থে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ দেখায়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেনের জন্য কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, “১১ বছর আগে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অভাবই ক্রিমিয়ার দখল ও ডনবাসে যুদ্ধের পথ খুলে দিয়েছিল। এরপর সেই একই অভাব রাশিয়াকে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে।”
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ইউরোপে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকের পর, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এক মাসব্যাপী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে। এর আওতায় আকাশ, সমুদ্র ও জ্বালানি পরিকাঠামো রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও আলোচনা করা হচ্ছে। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং “যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি এখনো অনেক দূরে।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অভিযোগ করেছেন যে শুক্রবার ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে আলোচনার সময় জেলেনস্কি কূটনৈতিক শিষ্টাচার দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স সোমবার এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে জেলেনস্কি ‘অবশেষে’ শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য হবেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে গোপন আলোচনা চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যা ইউক্রেন ও ইউরোপের দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment