সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
দেশজুড়ে ইউনিক ভোটার আইডি চালুর দাবিতে আজ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে ডেপুটেশন দিল রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী শ্রীরাধ হাকিম অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত বাংলার ভোটার তালিকা থেকে ভিন রাজ্যের ভুয়ো ও ভুতুড়ে ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে এই স্মারকলিপি দেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এর মেগা কর্মী সমাবেশ থেকে ভোটার তালিকা ধরে ধরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অভিযোগ তুলেছিলেন সেই অভিযোগের রেশ ধরেই আজ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে একের পর এক ভুয়ো ভোটারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা। তাদের দাবি,বাংলার ভোটকে প্রভাবিত করার জন্য বিজেপি চক্রান্ত করছে। অন্য রাজ্য থেকে ভোটার এনে তাদের নাম তুলেছে। অথচ সব জেনেও নির্বাচন কমিশন ঘুমিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বিএলও থাকেন না। এ ব্যাপারেও কমিশনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তৃণমূলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাসের দাবি, অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ হতে হবে এবং ভুতুড়ে বা ভিন রাজ্যের ভোটার নয় বাংলার মানুষের ভোটাধিকারকে সুরক্ষিত করতে হবে। একইসঙ্গে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের রুল ২৮ অনুয়ায়ী দেশজুড়ে এপিক কার্ডে ইউনিক আইডি নম্বর চালু দাবি করেন তারা। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, নিজেদের নিয়মের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন করছে। যদিও এর আগে একাধিকবার রাজ্যের বিরোধীদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে ভোটের বুথে আধার কার্ড এবং ভোটার এপিক কার্ডের সংযুক্তিকরণ করিয়ে তারপরে ভোট দানের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইউনিক আইডি নম্বর দিয়েই সেটা সম্ভব বলে জানিয়েছিল কমিশন। নির্বাচন কমিশনের নিয়মাবলীতেও এই নিয়মের কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয় বলে জানিয়েছিল কমিশন এবং তৃণমূল। ইউনিক আইডি চালু করতে হলে এই ব্যবস্থাও চালু করতে হবে সে সম্বন্ধে তৃণমূলের মতামতের বিষয়টি কিন্তু রাজ্যের তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা এড়িয়ে গিয়েছেন।
তৃণমূলের মন্ত্রীদের দাবি, আগে ভোটার কার্ডে বিধানসভা কেন্দ্রের হদিশ থাকতো। এখন থাকে না। একই আধারকার্ডে একাধিক ন়ামের পিছনে চক্রান্ত কি? প্রশ্ন তোলেন অরূপ বিশ্বাস। একে একটি রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র বলেও মনে করছে তৃণমূল।
তৃণমূল নেতৃত্বের সাফ কথা, বিভিন্ন ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পড়াস্ত করতে না পারায় এটা নয়া চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ঢুকিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য,
“পশ্চিমবঙ্গের মানুষরাই ভোট দেবে। উস্কানি মূলক কথা বলে ভোট ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে বিজেপি।”
পাশাপাশি রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তর জানিয়েছে, তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগের কথা তুলেছেন এবং নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল গুজরাট হরিয়ানা পাঞ্জাব সহ ভিন রাজ্যের ভোটারদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে যে অভিযোগ জানিয়েছেন সেক্ষেত্রে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরের কিছু করার নেই। কারণ ভিন রাজ্যের ভোটার তালিকায় হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই এ রাজ্যের। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকই সেই সমস্যার সমাধান করতে পারে বা কেন্দ্রীয়ভাবে দিল্লির নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। আজ তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের এই যুক্তি জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনে আধিকারিক দিব্যেন্দু দাস। তৃণমূলের রাজ্য প্রতিনিধি দলের যে স্মারকলিপি তা জাতীয় নির্বাচন কমিশন কে পাঠিয়ে দেওয়া হবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের পক্ষ থেকে বলেও জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি, যদি কোন ব্যক্তি জীবিত থাকেন কিন্তু ভোটার লিস্টে তাঁকে মৃত বলে দেখানো হয় সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি সশরীরে উপস্থিত থেকে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সহ যদি অভিযোগ জানান কমিশনে তাহলে কমিশন অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এবং তথ্যপ্রমাণ সন্তোষজনক হলে ওই ব্যক্তিকে ফের ভোটার লিস্টে নাম তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হবে। একই সঙ্গে কমিশন আইডেন্টিফাই করবে কে বা কারা ওই ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে চালিয়েছিল। সেইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে নির্বাচন কমিশন এমনটাই খবর নির্বাচন কমিশন সূত্রে।
ভুতুড়ে ভোটার কাণ্ডে একাধিক অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। একই ভোটার কার্ড নাম্বারের ভোটার অন্য রাজ্য আছে বলে অভিযোগ রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে করা হচ্ছে প্রতিদিন। এই যাবতীয় অভিযোগ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের তরফে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন সেই সমস্ত রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের নির্দেশ দেবে এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই রাজ্যের ওই সংশ্লিষ্ট ভোটারদের ভোটার কার্ড নাম্বার চেঞ্জ করার কথা বলা হবে। আপাতত ভুতুড়ে ভোটার কাণ্ডে এই রাজ্যে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের কিছু করার নেই যতক্ষণ না পরবর্তী কোনো নির্দেশ আসছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন থেকে এমনটাই খবর নির্বাচন কমিশন সূত্রে।