রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামছাড়া বেতন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত খরচ সাধারণ অভিভাবকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। সন্তানের মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ ভর্তি ফি, উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যয় এবং মাসিক বেতনের ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির পক্ষে এই ক্রমবর্ধমান খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে, ফলে ভালো স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন অনেকের কাছেই অধরা থেকে যাচ্ছে।
প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই বেসরকারি স্কুলগুলিতে যেভাবে বেতন বাড়ানো হয়, তাতে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য সরকার সক্রিয় হয়েছে এবং শীঘ্রই নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে বলে মঙ্গলবার বিধানসভায় জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা হয়, ফলে সন্তানের ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে বেসরকারি স্কুল বেছে নেন। তবে এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কারণ শুধু টিউশন ফি নয়, বরং বই, ইউনিফর্ম, পরীক্ষার ফি-সহ নানা অতিরিক্ত খরচ প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এতে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে চাপে পড়ছে এবং সন্তানের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে।
বেসরকারি স্কুলের ক্রমাগত খরচ বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ বাড়ছিল অভিভাবকদের মধ্যে। এই ইস্যুটি বিধানসভায় উত্থাপন করেন বাঁকুড়ার ছাতনার বিজেপি বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের পক্ষে এত বেশি খরচ বহন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে, তাই এই অনিয়ন্ত্রিত বেতন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন এবং জানান, রাজ্য সরকারের কাছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত ফি ও লাগামছাড়া বেতন বৃদ্ধি নিয়ে তারা গভীর উদ্বেগে রয়েছেন, তাই এর সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার শীঘ্রই একটি নতুন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন করতে চলেছে।
২০২৩ সালে রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, বেসরকারি স্কুলগুলির বেতন কাঠামো ও প্রশাসনিক নীতির উপর নজরদারি রাখতে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনে ১১ জন সদস্য থাকবেন, যেখানে নেতৃত্ব দেবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
এর পাশাপাশি, কমিশনে থাকবেন স্কুলশিক্ষা দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রতিনিধি এবং শিক্ষামন্ত্রীর মনোনীত দুই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। এছাড়াও, সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের প্রতিনিধিদের কমিশনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারি রাখা সম্ভব হয়। কমিশনের মূল লক্ষ্য হবে অভিভাবকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং বেসরকারি স্কুলগুলির বেতন কাঠামোয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, শুধু কমিশন গঠন করাই যথেষ্ট নয়, রাজ্য সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে। বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামছাড়া বেতন বৃদ্ধিতে রাশ টানতে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে, যা এই খাতের অসঙ্গতি দূর করবে। শীঘ্রই এই বিষয়ে বিধানসভায় একটি বিল আনা হবে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে অভিভাবকদের উপর আর্থিক বোঝা অনেকটাই কমবে এবং বেসরকারি স্কুলগুলিও আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Leave a comment
Leave a comment