এই বাংলার রাজনীতি। বিরোধী দল। বিরোধী দল নেতা। সেই আমলে সিপিএমের দোর্দণ্ড প্রতাপ দাপট। সেই দাপটেও একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদি গড়। আর একটা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক এর সন্ধান পাওয়া। যিনি সেই দলের ক্রাইসিসে, দলের দুর্দিনে যখন খুব খারাপ অবস্হা। আশংকাজনক অবস্থায় দল যখন এ পজিটিভ রক্তের এর অভাবে ভুগছে রক্তল্পতায়। দৌড় ঝাঁপ করছে, এদিক ওদিক ঘুরছে সেই অবস্থায় কেমন একাই সব সামলে দিয়েছেন তিনি দলকে নানা বিপদ থেকে উৎরে দিয়েছেন হাসিমুখেই। কাউকে কিছু টের না পেতে দিয়ে।
আর আবার তিনিই যখন সারারাত জেগে গোবিন্দপুর বস্তি আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে সবাই যখন দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে রাত জাগছেন আর গলা ছেড়ে কেউ কেউ গান ধরছেন দিদিকে খুশী করতে। সেই সময় দিব্যি তিনি নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর সত্যিই রাত জেগে অন্দোলন হচ্ছে কী না সত্যি না মিথ্যে কথা সেটা দেখতে বর্তমান তৃণমুলের এক বর্ষীয়ান সাংসদের স্ত্রী যিনি আজ আর বেঁচে নেই তিনি দেখতে ছুটে এসেছিলেন তাঁর অধ্যাপক স্বামীকে সেই রাতে গোবিন্দপুর বস্তির এলাকায়। আর এতো ঘটনা ঘটলেও তিনি ফোন বন্ধ করে গভীর নিদ্রায়।
এটাই তাঁর অভ্যাস বরাবরের। রাত নটার পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নয় স্বয়ং ভগবানও তাঁকে আর পাবেন না কোনোওভাবেই। তাঁর ফোন সুইচ অফ। এই নিয়মেই কাটিয়ে দিলেন তিনি তাঁর রাজনীতির একটা পরিচ্ছন্ন সুন্দর জীবন। যে জীবনে শুধু আজ্ঞাবহ দাস হয়ে জো হুজুর করে হাতজোড় করে বাঁচা নয় কিছুটা নিজের কর্মকৃতিত্বে দলের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে রক্ষা করে চললেন তিনি। নিজের স্বার্থের কথা আর ধান্দার কথা না ভেবেই কাটিয়ে দিলেন তিনি নিজের জীবন। আর একদিন হঠাৎ করেই সব ছেড়েও দিলেন তিনি দলের খারাপ সময়ে থাকলেও ভালো সময়ে আর থাকলেন না তিনি। বুঝতে পারলেন তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে দলে।
আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই হারিয়ে যাওয়া বিরোধী দলের এক নেতার কথা। সেই পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায় এর কথা। যিনি সেই পুরশুড়া থানায় গেলেন কোনোও আন্দোলন করতে সিপিএমের লাগাতার সন্ত্রাস এর প্রতিবাদ জানাতে। তৃণমূলের তখন সেই আন্দোলন হচ্ছে দিকে দিকে। পুরশুড়া থানার ওসির টেবিল উল্টে গেলো আন্দোলন এর জেরে। সেই সময় তো তারকেশ্বর বিধানসভার এলাকা পার করে চাঁপাডাঙ্গার মোড় পার হয়ে আর এগোনো যায়না কিছুতেই। না সাংবাদিক এগোতে পারে, রাজ্যে তখন টিম টিম করে জ্বলা তৃণমূল কংগ্রেস দলের কোনো নেতাও এগোতে পারে না। সেই আমলে পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায় নিজেই আন্দোলন করতেন নানা রকম ভাবেই। সেই কালীঘাটের বাড়ীতে তখন এতো ভীড়, লোক লস্কর পুলিশ পেয়াদা কিছুই নেই সেই সময়। বিকেল বেলায় এত সাংবাদিকের দল তখন দলে দলে দিদির বাড়ী ভীড় করতেন না। নিজের পয়েন্ট বাড়াতে আর নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে আর চা সিঙারা খেতে। সত্যিই বেশ স্বপ্নের মতো দিন ছিল সেই সময়।
দু হাজার দুই বা তার পরের সময় হবে আর কি। দু হাজার এক সালে বিধানসভা ভোটে জয়ের পর লাল পার্টির তখন রমরমা অবস্থা গোটা রাজ্যে। তৃণমূল কংগ্রেস তখন রিকেট রুগীর মত অবস্থা। এন ডি এ জোট ছেড়ে ফের দলের গভীর সংকটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার এন ডি এ জোটে ফেরার রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত। সেই আমলেও কেমন বিধানসভায় সকাল বেলা এগারটার সময় পৌঁছে গেছেন পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায়। কোনোও এক সেশনে বিরোধী দলনেতা হয়ে দাঁড়িয়ে পঙ্কজ বাবু নিজের বক্তব্য তুলে ধরছেন তিনি হাসিমুখে। বিধানসভায় কোনও হৈ চৈ হুল্লোড়, গণ্ডগোল , কাগজ ছিঁড়ে উড়িয়ে দেওয়া, মার্শাল ডেকে বিধায়ককে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া ছাড়াই।
আজকালের মতো অবস্থা নয় আর কি। আজকাল তো বিধানসভার বিজেপি দলের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভার অন্দরের থেকে বাইরেই রাস্তায় বেশি থাকেন তিনি। তাঁকে বিধানসভার অন্দরে আক্রমণ করা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে চিঠি দিতে হয় বিরোধী দলের নেতাকে। আর বিরোধী দলের নেতা বেশিরভাগ সময় সাসপেন্ড হয়ে বাইরেই থাকেন তিনি রাস্তায় থাকেন বিধানসভার অন্দরে নয়। কিন্তু সেই লাল সন্ত্রাসে ভরপুর গোটা রাজ্যে, কৃষি আমাদের ভিত্তি আর শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ এর স্লোগান দেওয়া সেই সিপিএমের আমলে তো দিব্যি পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায় এর মত নেতা হাসিমুখে কাজ চালিয়ে গেছেন বিধানসভায়। আবার দলের প্রয়োজনে অন্দোলনও করেছেন তিনি।
তাহলে কেন এই অবস্থা এখন বিধানসভার অন্দরে। রাজনীতির ময়দানে এত হৈ চৈ হুল্লোড় কেনো। কে জানে দিন বদলে গেছে যে অনেক আগের থেকে অনেক। আদিগঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। সেই লাল পার্টির বদলে এখন ঘাস ফুলের রমরমা রাজ্য জুড়ে। সেই রক্তাল্পতায় ভোগা টিম টিম করা দল এখন নধর শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা রাজ্য জুড়ে এদিক থেকে ওদিক। আর তার মাঝে গেরুয়া বাহিনীর লোকরাও চেষ্টা করছে একটু এই সুজলা সুফলা জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে জমিতে ফসল ফলাতে। যাতে যে কোনোভাবেই ক্ষমতা দখল করা যায়।
আর এই নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সেই হারিয়ে যাওয়া নেতা পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায়কে মনে পড়ে যায় আমার। যিনি সেই ব্যক্তি নিজের স্বার্থ রক্ষা না করেই দলের দুর্দিনে ছাতার মতই দলকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিজের কর্মকৃতিত্বে আর নিজের রাজনৈতিক বুদ্ধিতে আর বিচক্ষণতায়। সে কথা আজ আর কেউই মনে রাখেনি আজ। দলের নেত্রী আর দলের অন্য কেউই।
আজ পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায় তিনি আর নেই। আজ সেই দোর্দন্ড প্রতাপ লাল পার্টির সিপিএমও সরকারে নেই। কিন্তু সেই বিধানসভার অন্দরে সেই রাজনীতির সৌজন্যের দিনগুলো। সেই বিরোধী দলনেতার রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও তাঁকে বিধানসভায় বলতে দেওয়া। কোনোও হৈ চৈ হুল্লোড় ছাড়াই বিধানসভার কাজ হতে দেওয়া, দলের ভেতরের খবর সাংবাদিকের কাছে বলে দেওয়া সেই বিরোধী দলের নেতার হাসিমুখে কাউকে ভয় না পেয়েই। এগুলো কেমন যেনো একটা অন্য সৌজন্যের ছবি, অন্য বাংলার রাজনীতির ছবি অন্য সাংবাদিকতার ছবি তুলে ধরে আমাদের কাছে। যে ছবির আঁকিবুঁকি সাদা কালো রেখায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতই ভেসে থাকেন সেই হাসি মুখের এক পরিচ্ছন্ন নেতা পঙ্কজ বন্দোপাধ্যায়।