নানা চেষ্টা সত্ত্বেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনই থামবে কী না তা নিয়ে ঝুলে রইল একরাশ প্রশ্ন।ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে রাশিয়া।তবে তাঁর দাবি যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোর সুরাহা করতে হবে। পাশাপাশি অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে হবে।অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি কী ভাবে তা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনার পর ক্রেমলিনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শত্রুতা বন্ধের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।কিন্তু এমন যুদ্ধবিরতি চাই যাতে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে যাওয়া যায় এবং এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর হয়।’
তবে এই যুদ্ধ বন্ধের পেছনে কাজ করা চলা মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও প্রশংসা করেন তিনি।বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, “প্রথমেই আমি ইউক্রেন-সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। অনেকেই আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু চিনের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে অনেক সময় দিয়েছেন। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
প্রসঙ্গত, ভারত প্রথম থেকেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ চেয়ে শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছে।এই যুদ্ধ ঘিরে গোটা বিশ্ব আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গেলেও ভারসাম্যের কূটনীতি সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সদ্য হোয়াইট হাউসে গিয়েও, ভারত নিরপেক্ষ নয়,বরং ভারত শান্তির পক্ষে – এমন বার্তা ট্রাম্পকে দিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী।ভারতের সেই অবস্থানেরই এদিন প্রশংসা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।
হিসেব মত গত তিন বছর ধরেই জারি রয়েছে ইউক্রেন, রাশিয়ার যুদ্ধ।এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করেছে রুশ বাহিনী।তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি তিনি এই যুদ্ধ থামাবেন। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ওয়াশিংটনের পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য মস্কোতে রয়েছেন। তবে কিয়েভকে যুদ্ধ থেকে সাময়িক স্বস্তি দেয় এমন কোনো ‘তাড়াহুড়ো’ করা চুক্তি করতে নারাজ ক্রেমলিন।
এদিকে ক্রেমলিনের এই ধরি মাছ, না ছুই পানি অবস্থানে বেজায় চটেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর দাবি আসলে ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু তিনি সে কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে ভয় পাচ্ছেন! হোয়াইট হাউস মনে করছে আমেরিকা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে রাশিয়া রাজি হবে বলেই তাঁর আশা। এই প্রস্তাবে রাজি না-হলে রাশিয়া অর্থনৈতিক অবরোধের মুখেও পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। জেলেনস্কির দাবি, পুতিন নানা কৌশলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব খারিজ করারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।ইউক্রেন আগেই জানিয়েছে যে, তারাও এই প্রস্তাব সমর্থন করবে।
বৃহস্পতিবার দিনের শেষে পুতিন যখন যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতের মূল কারণগুলো খোঁজার কথা বলছেন ঠিক তার আগেই পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, “আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ভান করা কোনও পদক্ষেপ কারও প্রয়োজন নেই।” অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে রাশিয়ার অবস্থান হলো, “এটি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য অস্থায়ী বিরতি ছাড়া আর কিছুই নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর এই মন্তব্য করেন।
Leave a comment
Leave a comment