দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নতুন বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে অংশ নিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের সূত্র অনুযায়ী, সোমবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতি পদে অভিষেক ঘটাবেন। শপথ গ্রহণের পর বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের তৃতীয় সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। যদি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে এটিই হবে তাঁর প্রথমবারের মতো আরজি কর মামলার শুনানি পরিচালনার অভিজ্ঞতা।
প্রায় দেড় মাস পর, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে এই বহুল চর্চিত মামলার শুনানি। আদালতের নির্ধারিত সূচি অনুসারে, শুনানিটি সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিচারকদের সামনে উপস্থাপিত হবে। শুনানির তালিকা অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের পাশাপাশি এই বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের সিদ্ধান্ত আগেই কলেজিয়ামের সুপারিশে অনুমোদিত হয়েছিল। তবে আদালতের ছুটির কারণে তাঁর শপথগ্রহণ স্থগিত ছিল, যা শেষ পর্যন্ত ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় শপথ গ্রহণের পরই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমে যুক্ত হবেন।
সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বর এজলাসে বর্তমানে আরজি কর মামলার শুনানি চলছে, যেখানে এটি সোমবারের শুনানির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এখনো একটি বিচারপতির আসন শূন্য রয়েছে, এবং অনুমান করা হচ্ছে, শপথ নেওয়ার পর বিচারপতি বাগচী সেই পদ গ্রহণ করবেন। কলকাতা হাই কোর্টে কর্মরত থাকার সময় তিনি এই মামলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করেছিলেন। এমনকি, সিবিআই কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির আবেদনের শুনানিও তাঁর অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে, সুপ্রিম কোর্টে পদোন্নতি পাওয়ায় তিনি সেই মামলার শুনানি সম্পূর্ণ করতে পারেননি।
অন্যদিকে, তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও যৌন নিপীড়নের তদন্ত নিয়ে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, তদন্ত এখনো সম্পূর্ণ নয় এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অধরা রয়ে গেছে। তাঁদের মত, মামলার নিরপেক্ষ ও বিশদ পর্যালোচনা জরুরি, যাতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা যায়।
শুরুতে তাঁরা এই বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন, তবে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকায় হাই কোর্ট সেটি গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে, ন্যায়বিচারের আশায় তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন। গত ২৯ জানুয়ারির শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না পরিবারকে প্রশ্ন করেন, তারা মামলাটি কোন আদালতে পরিচালনা করতে ইচ্ছুক এবং তাদের চূড়ান্ত অবস্থান কী।
নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, সিবিআইয়ের তদন্তে বেশ কিছু অসংগতি রয়েছে, যা হাই কোর্টে খতিয়ে দেখা জরুরি। অন্যদিকে, শিয়ালদহ আদালত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আজীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। তবে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সিবিআই তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে।
পরিবারের অবস্থান অবশ্য ভিন্ন, তারা আদালতে জানিয়েছে যে তারা ফাঁসির দাবিতে একমত নয়। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠতে চলেছে, এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের দিকে নজর থাকবে সবার।
Leave a comment
Leave a comment
