আগুন লেগেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গলে।
পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে আউশগ্রাম জঙ্গলের আদুরিয়া,আকুলিয়া গ্রামের আসে পাশের বন, কালিকাপুর, হেদগড়া জঙ্গলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই আগুনে।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ বেশ কয়েকদিন ধরে জঙ্গলে আগুন জ্বললেও সম্পূর্ণ উদাসীন বনদপ্তর। আগুন নিরোধক গ্যাসের ট্র্যাঙ্কের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও করা হয়নি। আগুন নেভানোর জন্য বড় অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ছে আদুরিয়া বিটের কর্মীরা।
বেশ কয়েক দিন ধরেই জ্বলছে মোড়বাঁধ থেকে ১১ মাইল যাওয়া বা আসার পথে আকুলিয়া, কালিকাপুর, হেদগড়া জঙ্গল সংলগ্ন একাধিক এলাকা। জায়গায় জায়গায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জঙ্গল। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা ময়ূরেরও মৃত্যু হতে পারে এমন ভয়ানক আগুনের দহনে।
এক স্থানীয় বাসিন্দার তথা লেখক রাধামাধব বলেন, দশ বছরে এমন আগুন লাগেনি। নিজের চোখে দেখে আশ্চর্য হয়েছি। শুধু একটা, দুটো বোর্ড দেওয়াই সার কোনো টহলদারি নেই বনদপ্তরের এই এলাকায়। ফলে পি ডাব্লিউ ডি রাস্তার উপর থেকেই আগুন লাগানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিন চার দিন ধরে জ্বলছে এই আগুন। এখনও জ্বলছে কোথাও কোথাও। কেউ খোঁজ রাখে না। বনদপ্তরকে ফোন করে জানালে আগুন নেভাতে সচেষ্ট হয়। বনাধিকারিক উদ্যোগী হয়ে এলাকায় জলের ট্রাঙ্ক রাখার ব্যবস্থা করতে পারতেন। তাও করেননি এবার। এখনও আগুন জ্বলছে। ময়ূরের দল কোথায় পালিয়ে গেছে আগুনের ভয়ে।কয়েক বছর আগে আউশগ্রাম সংলগ্ন পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা জঙ্গলমহলের দেউল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি ময়ূর ছাড়া হয়েছিল। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ক্রমে ময়ূরের বংশবিস্তার ঘটেছে। তারা এখন আশেপাশের জঙ্গলেও ছড়িয়ে পড়েছে। আদুরিয়া জঙ্গল এলাকায় বর্তমানে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি ময়ূর রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। গত দু’বছর আগে যার সংখ্যা ছিল ৪০-৪৫টি।আউশগ্রামের আদুরিয়া, হেদোগরিয়ায় ময়ূরের সংখ্যা এখন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আউশগ্রামের আদুরিয়া, হেদোগরিয়ায় ময়ূরের সংখ্যা এখন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আউশগ্রামের হেদোগরিয়া ছাড়াও প্রেমগঞ্জ, রাঙাখুলা, আদুরিয়া প্রভৃতি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ঝাঁক ঝাঁক ময়ূর ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়েরা। এক একটি ঝাঁকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ময়ূর দেখা যায়। জঙ্গল থেকে ছেড়ে মাঝেমধ্যে পাশের মাঠগুলিতে চলে আসছে। আউশগ্রামের জঙ্গলে ইণ্ডিয়ান উলফ বা হেঁরোল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল, প্যাঙ্গোলিন, সজারু প্রভৃতি প্রাণীও দেখা যায়। তা ছাড়া বছর তিনেক ধরে এলাকায় পাইথনের দেখা মিলছে। ওইসব জীবজন্তুর সংখ্যাও এখন বেড়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।
তবে এই অবস্থায় জঙ্গলে আগুনে এই বন্য প্রাণীদের নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় বাসিন্দারা।আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ আব্দুল লালন জানান, জঙ্গলে আগুন লাগার পর থেকেই বনকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর কাছে হাত লাগিয়েছেন।না হলে আগুন আরো ভয়াবহ আকার নিত। স্থানীয় গেঁড়াইগ্রামের বাসিন্দা সেখ সঞ্জু বলেন, আগুনে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে জঙ্গলের। আগুন সম্পূর্ণ ভাবে নেভাতে না পারলে খুব সমস্যা হবে।
পানাগড় রেঞ্জ অফিসার প্রণব কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, এখন আপাতত আগুন নেভানোর কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে কোথাও আগুন লাগার খবর নেই। তবে জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে আগুন ধরে যাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি আগুন নেভানোর।তিনি বলেন ফায়ার ব্লো নিয়ে জঙ্গলে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়।
Leave a comment
Leave a comment