সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ভুয়ো ভোটার রুখতে এবার কেন্দ্রীয় মডিউলের মেকানিজমে পদ্ধতিগত বদল আনছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড যেখানে যেখানে ধরা পড়েছে সেই সমস্ত ভোটারদের নতুন করে এ পি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। জটিলতা এড়াতে নতুন এপিক কার্ডের সামনের দিকে নতুন নম্বর দেওয়া থাকবে এবং নতুন এপিকের পিছন দিকে তার পুরনো নম্বর দেওয়া থাকবে। যাতে ভোটার কার্ডের মাধ্যমে কোন প্রশাসনিক কাজকর্মে ওই ভোটার বাধা প্রাপ্ত না হন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের।
এতদিন ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন যে মেকানিজম ব্যবহার করত এবার সেই মেকানিজমের সঙ্গে জেলায় জেলায় ERO রা যুক্ত হলেন। আজ সমস্ত জেলার জেলাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। সেখানেই নির্বাচন কমিশনের এই নয়া সিস্টেমের কথা জানানো হয়। মূলত ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড বা ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন নিজেই একটি নির্দিষ্ট মডিউল ব্যবহার করত। যে মডিউলে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোড নম্বর ব্যবহার করা হয়। আলফাবেট বা বর্ণমালা এবং নিউমেরিক্যাল বা সংখ্যা এই দুইয়ের সমন্বয় এই নির্দিষ্ট কোড দিয়ে বিধানসভা গুলিকে চিহ্নিত করা হয়। যদি ভিন রাজ্যের কোন বিধানসভায় এ রাজ্যের কোড ব্যবহার করা হয় তাহলে সহজেই এই বিশেষ কোড নম্বরের পার্থক্য ভো ভোটার বা ডুপ্লিকেট এপিক কার্ডকে চিহ্নিত করতে পারে। এতদিন এই মডিউল বা সিস্টেম শুধুমাত্র কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ছিল। এই নির্দিষ্ট মডিউল বা সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করা হলো জেলায় জেলায় ইআরও বা ইলেকশন রিটার্নিং অফিসারদের। ফলে জেলায় জেলায় ইয়ারোরা এবার ভুয়া ভোটার বা ডুপ্লিকেট চিহ্নিত করতে পারবেন তাদের নির্দিষ্ট কম্পিউটারে ক্লিক করেই। যেহেতু প্রতিটি রাজ্যে ভোটার তালিকা তৈরীর কাজে পি আর ও রাই মূল স্তম্ভ ফলে ভোটার তালিকায় বুয়া ভোটার বা ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড কোথায় রয়েছে তা চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে ইআরও-দের। নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের মেঘা কর্মী সভা থেকে যে ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একাধিক রাজ্যে একই এপিক কার্ড নাম্বারে একাধিক ভোটার কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্ন তুলে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পারদ চড়েছে। উত্তাল হয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশনও। স্বাভাবিকভাবেই সব দিক খতিয়ে দেখে এই ডুপ্লিকেট এপিক কার্ড বা ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে অধীনে থাকা এই নির্দিষ্ট মডিউল বা সিস্টেমকে এবার জেলায় জেলায় পিয়ারদের যুক্ত করে কিছুটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করল এটা বলা যেতে পারে। চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই এই ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করার কাজ শেষ করতে হবে। পি আর ও দের এমনই সময়সীমা ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে।
উল্লেখযোগ্য, রাজ্যের কোনো ভোটার তার এপিক কার্ড ভিন রাজ্যে স্থানান্তর করার জন্য অন্য রাজ্যে আবেদন করলে ওই রাজ্যে সেই আবেদন নির্দিষ্ট ফরম্যাটে পশ্চিমবঙ্গে পাঠাবে। পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট জেলার ইআরও ওই ভোটারের তথ্য খতিয়ে দেখে এ রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেবে। এই ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করতে সাত দিনের সময়সীমাধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রসঙ্গত ভুয়ো ভোটার কার্ড বা ডুপ্লিকেট নম্বর ছাড়াও এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ভোটার স্থানান্তরিত হলেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটার তালিকায় সেই ভোটারের নাম রয়ে গিয়েছে। ভোটার খুঁজতে গিয়ে এই ধরনের বেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি নজরে এসেছে কমিশনের। সেই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সিইও এবং জেলা স্তরে ইআরও-দের নজরে আনা হয়েছে। অতি দ্রুত এই সমস্ত ভ্রান্তি দূর করা নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তর জানিয়েছে, রাজ্যের প্রায় সাত কোটি ভোটারের মধ্যে এখনো পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে পেরেছে কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গ ভোটার অন্য