বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ডে পুরনো কাপড় পুনর্ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পুরনো শাড়িকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করার ধারাটি এখন বেশ জনপ্রিয়। শাড়ি বাঙালি মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শুধুমাত্র ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পুরনো শাড়ির রঙ, নকশা ও কাজের বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে লং ড্রেস, কুর্তি, স্কার্ট, পালাজো এবং ব্লাউজ। এটি যেমন পরিবেশ-বান্ধব, তেমনই ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করছে।
ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতে, পুরনো শাড়ি দিয়ে নতুন পোশাক তৈরির মাধ্যমে একদিকে যেমন সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটে, তেমনই তা পরিবেশ সংরক্ষণেও সহায়ক হয়। সিল্ক, কটন বা তসর শাড়ি সহজেই ট্রেন্ডি লং ড্রেস তৈরির জন্য উপযুক্ত। শাড়ির পাড় এবং কাজের অংশটি ড্রেসের নকশায় সংযুক্ত করলে তা দেখতে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। অনেকেই শাড়ির জটিল কাজের অংশকে ব্লাউজের ডিজাইনে সংযুক্ত করছেন, যা ফিউশন লুক তৈরি করছে।
পালাজো এবং স্কার্ট তৈরির ক্ষেত্রেও পুরনো শাড়ির রঙ এবং কাজ পোশাকের সৌন্দর্য বাড়ায়। বিশেষ করে বেনারসি বা কাঞ্জিভরম শাড়ি দিয়ে তৈরি পালাজো এবং স্কার্ট বর্তমানে বেশ ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে। অনেকে শাড়ির বর্ডার অংশ দিয়ে ডিজাইন করা ব্লাউজ তৈরি করছেন, যা পার্টি ও অনুষ্ঠানে বেশ মানানসই। সাধারণত, সিল্ক ও তসর শাড়ি দিয়ে তৈরি ব্লাউজগুলি বেশ স্টাইলিশ দেখায় এবং তা ট্র্যাডিশনাল ও ওয়েস্টার্ন উভয় পোশাকের সঙ্গেই ভালো মানায়।
শুধু পোশাকই নয়, পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি করা যায় ব্যাগ, ওড়না, স্কার্ফ এবং দোপাট্টা। বর্তমানে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার পুরনো শাড়ির কাজ সংরক্ষণ করে তা দিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করছেন। অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস এবং স্থানীয় ডিজাইনাররাও এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন সংগ্রহ তৈরি করছেন। বুটিক ও অনলাইন শপে পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফিউশন পোশাকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
পুরনো শাড়ি পুনর্ব্যবহারের এই প্রবণতা শুধুমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখছে না, এটি নতুন ধরনের ফ্যাশনেরও সংজ্ঞা তৈরি করছে। এই উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশে বর্জ্য কমছে, অন্যদিকে স্থানীয় কারিগরদের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। বেনারসি, তসর বা কটনের শাড়ি দিয়ে তৈরি পোশাক উৎসবে ও অনুষ্ঠানে বেশ মানানসই হয়। এই ধরনের ফিউশন পোশাকের চাহিদা বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন মার্কেটে পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি পোশাকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বুটিক ও ডিজাইনার স্টোরে এই ধরনের পোশাকের বিক্রি বাড়ছে। এমনকি অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার কাস্টমাইজড পোশাক তৈরির জন্য গ্রাহকদের পুরনো শাড়ি গ্রহণ করছেন এবং তা দিয়ে নতুন পোশাক তৈরি করছেন। এভাবে পুরনো শাড়ির প্রতি মানুষের ভালোবাসা যেমন বজায় থাকছে, তেমনই নতুন ধারার ফ্যাশন ট্রেন্ডও তৈরি হচ্ছে।
এই ধরনের ফিউশন ফ্যাশন ট্রেন্ড শুধু যে ভারতেই জনপ্রিয় তা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এই পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। পরিবেশ রক্ষা এবং নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরির জন্য পুরনো শাড়িকে নতুন রূপে ব্যবহার করা একটি চমৎকার উদ্যোগ। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা, তেমনই সৃজনশীলতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে।