যুদ্ধবিরতির নামে কিছুদিন বন্ধ ছিল হামলা। রমজান মাসে মৃত্যুভয় থেকে মুক্তি, একটু বেঁচে থাকার অক্সিজেন খুঁজে পাচ্ছিল গাজার মানুষজন। কিন্তু কাউকে সেভাবে কিছু জানতে না দিয়েই মঙ্গলবার আছড়ে পড়ল হামলা। গত ১৯ জানুয়ারি হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজায় ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় এই হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন,প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, রমজান মাসে হওয়া গাজায় ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর হামাসের লক্ষ্যগুলোতে এই বিমান হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। উত্তরের গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহসহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যগুলোতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। তারা বলেছে, এই হামলা রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে করা হয়েছে। ইজরায়েল গাজা সীমান্তের কাছে অবস্থিত সব স্কুল বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছে।
কেন ফের এই হামলা?
হামাস বারবার ইজরায়েলি পণবন্দীদের মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর জানিয়েছে।তাই এই হামলা চালানো হয়েছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনেই হামাসের লক্ষ্যগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ইজরায়েল এই হামলা চালানোর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
কী বলছে হামাস?
যদিও হামাস এই হামলার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করেছে ইজরায়েলকে। তাদের দাবি এই হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। হামাসের বক্তব্য, এই হামলার ফলে গাজায় আটক পণবন্দীদেরদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি হামাসের সঙ্গে ৩ পর্বের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। ইজরায়েল তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হলেও তা বর্ধিত করতে চাইছিল। অন্যদিকে হামাস চাইছিল দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার পরেই পণবন্দীদের মুক্তি। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২ মার্চ। ইজরায়েল প্রথম ধাপ মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াতে চায় এবং তাদের দাবি দ্বিতীয় ধাপে যেতে গেলে গাজায় সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং হামাস অপসারণ করতে হবে।
ফের কঠিন হচ্ছে গাজা পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে হামাস শর্ত দিয়ে বলেছে তারা আমেরিকান-ইজরায়েলি সৈন্য এডান আলেকজান্ডার এবং চার পণবন্দীর দেহ মুক্ত করতে রাজি আছে, যদি ইজরায়েল দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলোচনা শুরু করে। তবে ইজরায়েল হামাসের এই প্রস্তাবকে পণবন্দীদের পরিবারের উপর ‘মানসিক যুদ্ধ’ চালানোর চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন ইজরায়েলি পণবন্দীকে মুক্ত করে, যাদের মধ্যে পাঁচজনের দেহ ছিল। এর বিনিময়ে প্রায় ১,৮০০ প্যালেস্টিনিয়ান বন্দী মুক্তি পায়। তথ্য বলছে হামাস এখনও প্রায় ৫৯ জন পণবন্দী আটক করে রেখেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইজরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সীমান্ত পেরিয়ে হঠাৎই হামলা চালায়।এতে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই অসামরিক সাধারণ মানুষ। এছাড়া ২৫১ জন পণবন্দীকে আটক করা হয়। এরপর থেকে ইজরায়েলের পাল্টা হামলায় ৪৮,০০০-এর বেশি প্যালেস্তেনীয় নিহত এবং ১.১২ লক্ষের বেশি আহত হয়েছেন।