রাশিয়ার অ্যাস্ট্রাখান অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ফলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, সোমবার ভোরে এই হামলার ফলে শোধনাগারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে আগুন ধরে যায়। অগ্নিকাণ্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং গোটা এলাকায় কালো ধোঁয়ার মেঘ দেখা যায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ড্রোনটি শোধনাগারের একটি প্রধান অংশে আঘাত হানে, যার ফলে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে এবং মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে স্থানীয় দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন আংশিক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, শোধনাগারের বেশ কিছু অবকাঠামো সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
এই হামলায় শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ফলে শোধনাগারের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন এবং তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনী এবং উদ্ধারকারী দল যৌথভাবে কাজ করছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে। রুশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের হামলা রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। রাশিয়া এই হামলার যথাযথ জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, দেশের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্থাপনাগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে তারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ইউক্রেনের সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা রাশিয়ার সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, “রাশিয়া আমাদের ভূখণ্ডে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। এই ড্রোন হামলা এবং তেল শোধনাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রুশ সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিকবার ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তেল শোধনাগারে হামলার ঘটনা রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।