নিয়মের নানা অসামঞ্জস্য তুলে ধরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কারের আহ্বান জানালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার রাইসিনা ডায়ালগের ‘থ্রোনস অ্যান্ড থর্নস: ডিফেন্ডিং দ্য ইন্টিগ্রিটি অফ নেশনস’ সেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন রাষ্ট্রসঙ্ঘ কাশ্মীর ইস্যুতে পদ্ধতিগত ভুল করেছে।
সদ্য প্রকাশিত এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মত সংস্থা গুলোর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে তার সংস্কারের উপর জোর দেন। এবার বিদেশমন্ত্রীর কথাতেও উঠে এল সেই পরিবর্তনের ও বদলের কথা।
উদাহরণ টেনে জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী দীর্ঘতম সময় ধরে চলা একটি ভূখণ্ডের অবৈধ দখল ভারতের কাশ্মীরে হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সম্পূর্ণ রাজ্য, যার মধ্যে গিলগিট ও বাল্টিস্তানও রয়েছে (১৯৭০ সালের আগে যা উত্তরাঞ্চল নামে পরিচিত ছিল), ১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তান একতরফা আগ্রাসনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর আক্রমণ করে এবং তারপর থেকে ভারতীয় ইউনিয়নের অংশগুলিকে অবৈধভাবে দখল করে রয়েছে।
এই ঐতিহাসিক অবিচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জয়শঙ্কর একটি ” নতুন, শক্তিশালী এবং ন্যায়সঙ্গত” রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেন। জয়শঙ্কর এদিন ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রসঙ্ঘ জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু অংশে পাকিস্তানের অবৈধ দখলকে নিন্দা না করে বড় ভুল করেছে। তিনি বলেন, “আক্রমণকারী” (পাকিস্তান) এবং “শিকার” (ভারত) একই শ্রেণীতে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার কথা বলি। আমরা সবাই একমত যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এটিই গোটা বিশ্বের নিয়মের ভিত্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, একটি দেশের দীর্ঘতম সময় ধরে অবৈধ উপস্থিতি ও একটি ভূখণ্ডের দখল ভারতের ক্ষেত্রে ঘটেছে, যা আমরা কাশ্মীরে দেখেছি।”
গোটা বিষয়টির সুষ্ঠু বিচার পেতে ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের দ্বারস্থ হয়। ডায়ালগে এদিন জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘে গিয়েছিলাম, কিন্তু যা একটি আক্রমণ ছিল তাকে একটি বিরোধে পরিণত করা হয়েছিল। তাই আক্রমণকারী এবং শিকারকে সমান স্তরে রাখা হয়েছিল। দায়ী পক্ষ কারা ছিল? যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।” ডায়ালগের মঞ্চ থেকেই এই ইস্যুতে প্রশ্ন তোলেন বিদেশমন্ত্রী।
একটি সংস্কার হওয়া নতুন এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষে জয়শঙ্কর বলেন, নিয়ম সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রসঙ্ঘের দরকার, এর জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রয়োজন।”
Leave a comment
Leave a comment