হল প্রতীক্ষার অবসান।সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে সঙ্গে নিরাপদেই পৃথিবীতে ফিরলেন চার মহাকাশচারী।বাকি দুই নভোচারী নাসার নিক হেগ এবং রসকসমসের কসমোনট আলেকজান্ডর গোর্বুনভ।এলন মাস্কের স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযান নভোচারীদের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩:২৭ মিনিটে সফলভাবে অবতরণ করে।তৈরি হয় এক অপূর্ব মুহূর্ত।নীল সমুদ্রে তখন যেন ম্যাজিক।কাছেই রেসকিউ টিম আর আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডলফিনরা।নভোচারীদের ফিরে আসার সময় ডলফিনরাই যেন পৃথিবীতে স্বাগত জানাল তাদের।
দীর্ঘ ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে মহাকাশচারীদের নিয়ে রওনা দেয় ক্রু-৯ স্পেসক্রাফট। সুনীতারা এই পর্বে স্পেস স্টেশনে তাদের দায়িত্ব সেখানে থেকে যাওয়া নতুন ক্রুদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
গত বছর ৫ জুন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সুনীতা ও বুচ। আট দিনের কাজে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়ে ৯ মাসের জন্য আটকে পড়েছিলেন নাসা-র এই দুই নভোচর। ২৮৫ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এ বার স্পেস এক্স-এর ড্রাগন ক্যাপসুলে মহাকাশযানে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার এই দুই নভোচর। তবে রেকর্ড বলছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের থেকেও বেশি সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন আরও চার নভোচর। কিন্তু মনে রাখতে হবে সুনীতারা মহাকাশে গিয়েছিলেন মাত্র ৮ দিনের জন্য।মহাকাশে দীর্ঘ সময় থেকে যাওয়ার জন্য কোনও প্রস্তুতিও ছিল না তাঁদের। তাঁদের ফেরানো নিয়ে তৈরি হয় বিস্তর সমস্যা।এই কারনেই গোটা বিশ্বের কাছে এতটা নজর কাড়ল সুনীতাদের ফেরাটা।
এলন মাস্কের স্পেসএক্সকে ক্রু-৯-কে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফ্যালকন ৯ রকেটের উপর ড্রাগন ক্যাপসুল মিশনের জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়। ক্রু-৯-এর জায়গায় এখন ক্রু-১০ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থেকে গেছে। হিসেব মত নির্ঘন্ট মেনেই নভোচরদের নিয়ে রওনা দিয়েছিল ক্রু-৯ স্পেসক্রাফট।নাসা তাদের হিসেবে জানায় তাদের পৃথিবীর বুকে ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ১৭ ঘণ্টা। মঙ্গলবার শেষ রাতে বা বুধবার ভোর রাতে সুনীতা উইলিয়ামসদের নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসবে স্পেস ক্যাপস্যুল। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশে অবস্থান আইএসএস-এর। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত ছুটে আসার সময় প্রচন্ড গতি থাকবে ওই স্পেস ক্যাপস্যুলের। বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে হবে ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এটাই ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে চিন্তার কারন।এ ভাবে মাটির ১০০ কিলোমিটার উপরে এসে সার্ভিস মডিউল থেকে আলাদা হয়ে যায় ক্রু-মডিউল। এই ক্রু-মডিউলেই ছিলেন সুনীতারা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২ কিলোমিটার উপরে ক্রু-মডিউলের তিনটি প্যারাশুট খুলে যায়। সমুদ্রে মডিউলের আছড়ে পড়ার অভিঘাত কমানোর জন্যই থাকে এই প্যারাশুট। ১৭ ঘণ্টার যাত্রার পর মহাকাশ ক্যাপসুলটি ফ্লোরিডা উপকূলে ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিটে সমুদ্রে অবতরণ করে। এরপর উদ্ধারকারী জলযান চার মহাকাশচারীকে ক্যাপসুল থেকে উদ্ধার করে। সেপ্টেম্বর মাসের পর প্রথমবারের মতো ক্যাপসুলের সাইড হ্যাচ খোলা হয়। নভোচারীরা ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন।তাদের হিউস্টনে ৪৫ দিনের বিশ্রাম, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুনর্বাসন প্রোগ্রামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
Leave a comment
Leave a comment