মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিপুল পরিমাণ গোপন নথি জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইটে ৬৩ হাজার পৃষ্ঠার প্রায় দু হাজার ২০০ ফাইল পোস্ট করা হয়েছে।যদিও প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথি জনসমক্ষে প্রকাশ করার কথা ছিল।
কিন্তু কেন এই জন এফ. কেনেডি হত্যাকান্ড নিয়ে নথি প্রকাশ? কেন সেই হত্যাকান্ড নিয়ে এত বিতর্ক? আসলে ১৯৬৩ সালের বহুল আলোচিত ও রহস্যঘেরা ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে এখনও ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহল আছে।কারণ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছিল।২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি বাকি সব নথি প্রকাশের অনুমতি দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তার সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় পিছিয়ে যান।এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত অবশিষ্ট গোপন ফাইল প্রকাশের নির্দেশ দেন।
৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির রহস্যমৃত্যু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাসে একটি মোটরকেডে ভ্রমণকালে নিহত হন।এই মারাত্মক হামলায় টেক্সাসের গভর্নর জন কন্যালিও আহত হন।কেনেডির স্ত্রী জ্যাকুলিন কেনেডি এবং কন্যালির স্ত্রী নেলি কন্যালিও ঘটনাস্থলে উপস্থিতি ছিলেন।তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর, ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন দ্রুত প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন।
জনসন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন, যা ওয়ারেন কমিশন নামে পরিচিত। কমিশন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামের এক কমিউনিস্ট কর্মী একাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ওয়ারেন কমিশনের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও, ছয় দশক ধরে সাধারণ মানুষ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে নি।এখনও জনসাধারণের মনে তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।২০২৩ সালের একটি গ্যালপ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান বিশ্বাস করেন যে অসওয়াল্ড একা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাননি।এর পিছনে একাধিক শ্যুটারের হাত আছে বলে মনে করা হয়।
হত্যাকান্ডের পিছনে সিআইএ?
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পিছনে কী সিআইএর হাত? কেনেডির হত্যার পরেই সামনে আসে গ্যারি আন্ডারহিল নামের এক প্রাক্তন সিআইএ অফিসারের নাম যিনি মনে করতেন যে সিআইএ-এর একটি গোষ্ঠী কেনেডির হত্যার জন্য দায়ী ছিল।তবে গ্যারি আন্ডারহিল এমনটা বলার মাত্র ৬ মাস পরে তাঁকে ওয়াশিংটনের অ্যাপার্টমেন্টে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়।
নতুনভাবে ডিক্লাসিফাইড উপকরণগুলির মধ্যে, সিআইএ-এর গোপন অপারেশন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ‘ব্ল্যাক অপস প্রোগ্রাম’ রয়েছে যা কেনেডির কার্যকালে সক্রিয় ছিল। কেন এই ফাইলগুলো গোপন রাখা হয়েছিল সেই প্রশ্ন তুলেই সন্দেহ করা হয় যে সংস্থাটি গোপন অপারেশনে জড়িত থাকতে পারে।
সোভিয়েত, কেজিবি এবং অসওয়াল্ড
জন এফ কেনেডি হত্যাকান্ডে লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামের এক কমিউনিস্ট কর্মীর নাম উঠে আসে। একটি নথিতে কেজিবি কর্মকর্তা নিকোনভের একটি বিবরণ মেলে যাতে বলা হয় যে অসওয়াল্ড একজন কেজিবি এজেন্ট ছিলেন।ওই রিপোর্টে বলা হয় যে সোভিয়েত গোয়েন্দারা তাকে ইউএসএসআরে থাকাকালে ঘনিষ্ঠ নজরদারির মধ্যে রেখেছিল।এভাবেই একের পর এক সামনে আসতে থাকা তথ্যে ও তত্ত্বে আরও জটিল হয়ে উঠেছে কেনেডি হত্যাকাণ্ড।
কদিন আগে ওয়াশিংটনের দ্য কেনেডি সেন্টারে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ‘এটির জন্য লোকজন দশকের পর দশক অপেক্ষা করে আছেন।” দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন। সেই আদেশে কেনেডি ও তাঁর ভাই রবার্ট কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র হত্যা-সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা পেশ করতে ফেডারেল সরকারকে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ২,৮০০ নথি প্রকাশ করা হয়। তারপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে আরও প্রায় ১৭,০০০ টি রেকর্ড প্রকাশ করা হয়।কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কিছু নথি এতদিন গোপন করেই রাখা হয়েছিল। মার্কিন জাতীয় আর্কাইভ অনুসারে,কর্তৃপক্ষ ১৯৯২ সালের জেএফকে রেকর্ডস আইন অনুসারে পর্যালোচনা করা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার নথির বেশিভাগই প্রকাশ করেছে।এখন বাকি থাকা বিপুল নথি সামনে এনে কেনেডি হত্যাকান্ডের যাবতীয় রহস্য, তা যদি থেকেও থাকে তা সকলের সামনে খুলে দিতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন।