হরিয়ানার এক গ্রামে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত থাকার সন্দেহে এক ব্যক্তিকে ৭ ফুট গভীর কূপে পুঁতে হত্যা করেছেন স্বামী। ঘটনাটি সামনে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্প্রতি জানতে পারেন যে তাঁর স্ত্রী বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত। এই সম্পর্ক নিয়ে আগে থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। কিন্তু পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায় যখন স্বামী ভাড়াটিয়ার সঙ্গে স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত দেখে ফেলেন। এরপরই তিনি রাগের মাথায় ভাড়াটিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতের বেলা তিনি ভাড়াটিয়াকে কথা বলার অজুহাতে বাইরে ডেকে নিয়ে যান। তারপরই পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁকে আক্রমণ করেন। অভিযোগ, তিনি প্রথমে ভাড়াটিয়াকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন, তারপর অচেতন অবস্থায় ৭ ফুট গভীর একটি কূপে ফেলে দেন। পরে সেই কূপ মাটি দিয়ে ঢেকে দেন, যাতে কারও সন্দেহ না হয়।
ঘটনার পরপরই ভাড়াটিয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। তাঁর পরিবার এবং স্থানীয়রা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং অভিযুক্তের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ হয়। অভিযুক্তকে জেরা করতেই তিনি সব স্বীকার করেন। অভিযুক্ত পুলিশকে জানান, তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই রাগের মাথায় এই পদক্ষেপ নেন।
পুলিশ কূপ খুঁড়ে ভাড়াটিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের অনুমান, আঘাত পাওয়ার পর তিনি কূপে পড়ার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান।
অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ‘‘আমি নিজের চোখে যা দেখেছি, তা সহ্য করতে পারিনি। তাই রাগের বশে তাঁকে হত্যা করেছি।’’ অভিযুক্তের স্ত্রী এই ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচণ্ড রাগ এবং সন্দেহ প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু স্বামী তাঁর কথা শোনেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় হতবাক। তাঁদের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সাধারণত শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তাঁরা কখনও ভাবেননি যে তিনি এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে পারেন। একজন প্রতিবেশী বলেন, ‘‘ওঁরা ভালো পরিবার ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা চলছিল। কিন্তু এইভাবে কেউ খুন করে ফেলবে, তা আমরা ভাবতেই পারছি না।’’
পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে। তদন্তের অংশ হিসাবে অভিযুক্তের স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। পুলিশ জানতে চায়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে রয়েছে কি না। পাশাপাশি, ঘটনার দিন অভিযুক্ত কীভাবে ভাড়াটিয়াকে নিজের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘটনার পর থেকে অত্যন্ত আতঙ্কে ছিলেন। তবে জেরার মুখে তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে চার্জশিট প্রস্তুত করছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ এই ঘটনার পরে এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা পুলিশের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আদালতে পেশ করা হবে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে।