রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী আজমের শরিফ দরগাহ ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ঈদের আগে দরগাহ কমিটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই সংশোধনী মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে এবং ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। দরগাহ কমিটির বক্তব্য অনুসারে, এই সংশোধনী কার্যকর হলে ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার কমবে এবং প্রকৃত হকদাররা এর সুফল পাবে।
ওয়াকফ সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে এই সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডগুলোর স্বচ্ছতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ওয়াকফ সম্পত্তির দখল নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে বা এর ব্যবহার ঠিকমতো করা হচ্ছে না। দরগাহ কমিটি মনে করে, সংশোধিত আইন কার্যকর হলে এই সমস্যা অনেকটাই কমবে এবং এই সম্পত্তিগুলো প্রকৃতপক্ষে সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগবে।
এই বিষয়ে দরগাহ কমিটির মুখপাত্র বলেন, ‘ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার রোধ করতে এবং প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে এর সুফল পৌঁছানোর জন্য এই সংশোধনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই বিষয়টি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করা এবং আইন মেনে চলা।’
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে মুসলিম সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকম। কিছু সংগঠন এই পরিবর্তনকে সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে, যেখানে অন্য কিছু গোষ্ঠী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের কিছু সদস্য এই সংশোধনীর ফলে ক্ষমতা হ্রাস পাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে আজমের দরগাহর সমর্থন সরকারের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রচুর ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এর সঠিক ব্যবহারের অভাব রয়েছে। নতুন সংশোধনী কার্যকর হলে এই সম্পত্তিগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, দরগাহ কমিটির মতামত এই বিষয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হতে পারে।
এদিকে, মুসলিম সংগঠনগুলোর একাংশ মনে করছে, সরকারের উচিত সংশোধনী প্রণয়নের আগে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা। এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, ‘ওয়াকফ বোর্ড ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা বিতর্ক তৈরি করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দরকার, তবে তা যেন জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হয়।’
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোই এই সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য। সংশোধনী অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তির তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম লাগু করা হবে এবং সেগুলোর পরিচালনা আরও স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি, এই সম্পত্তি যাতে ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তন কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে সংশোধনীর সঠিক প্রয়োগের ওপর। মুসলিম সমাজের মধ্যে এই বিষয়ে আরও আলোচনা ও মতবিনিময়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আজমের দরগাহর মতামত এই আলোচনার গতিপথকে নতুন দিক দিতে পারে এবং সরকার ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের পথ সুগম করতে পারে।