সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
গাছেদের ‘শেষকৃত্য’!
শুনে একটু অবাক লাগছে বৈকি। দেশের যারা বরণীয় তাদের মৃত্যুতে শেষকৃত্যের কথা সকলেই জানেন দেখেছেন। কিন্তু গাছেদের শেষকৃত্য! হ্যাঁ, উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুন জুড়ে আজকের মূল ছবিটা ছিল এমনই। পরনে সাদা পোশাক, মুখে কালো কাপড় বাঁধা। গাছের শুকনো ডাল দিয়ে তৈরি প্রতীকী শববাহী খাটিয়া কাঁধে নিয়ে দেহরাদুন শহরের ক্যাডেট গ্রাউন্ড থেকে মূল প্রশাসনিক ভবনের দিকে মৌন মিছিল করে এগিয়ে চলেছেন বহু মানুষ। যাদের হাতে রয়েছে গোছা গোছা শুকনো গাছের মরা ডাল, কারো হাতে শুকিয়ে যাওয়া মচমচে পাতা। আর সেই কাঠ কুটো নিয়ে আসা হয়েছিল দেহর আধুনিক রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম থেকে জি স্টেডিয়ামকে স্থানীয় মানুষজন “গাছেদের শ্মশান” বলে আখ্যা দিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে সহস্রধারা রোড থেকে গাছগুলিকে তুলে এনে এই স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলিকে আর বাঁচানো যায়নি। সহস্ত্র দ্বারা রোড থেকেই যখন কাজগুলিকে তুলে আনা হচ্ছিল তখন থেকে পরিবেশ প্রেমিক থেকে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের লড়াই টেকেনি। প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তে গাছগুলিকে স্টেডিয়ামে এনে বসানো হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের বাঁচানো যায়নি। অবশেষে সারি সারি গাছ দিনের পর দিন শুকিয়ে যেতে যেতে অবশেষে মৃতপ্রায় হয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে সেই মৃত গাছের অংশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন হয়ে কার্যত ধিক্কার বা প্রতিবাদ জানিয়েছেন বহু মানুষ। প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত তাদের এগোতে দেয়নি পুলিশ মাঝপথেই মানুষের মিছিলকে আটকে দেওয়া হয়। যেখানে তা আটকে যান সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান পরিবেশ প্রেমী সাধারণ মানুষজন। শুধু দেহরাদুনে নয়, প্রায় উত্তরাখন জুড়েই এই গাছ বাঁচাও আন্দোলনে প্রতিবাদ মিছিল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এই গাছ প্রেমিক মানুষের আন্দোলন, ধিক্কার, প্রতিবাদ এবং সবুজের জন্য হাহাকার উত্তরাখণ্ডের বিখ্যাত চিপকো আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদকারীদের দাবি সাতের দশকের চিপকো আন্দোলনের পর ফের দেশ জুড়ে এই গাছ বাঁচাও আন্দোলনে মানুষের জাগরণ ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, হিন্দি শব্দ চিপকোর অর্থ “আলিঙ্গন করা” বা “আঁকড়ে থাকা” এবং এটি কাঠ কাটতে বাধা দেওয়ার জন্য গাছ আলিঙ্গনের বিক্ষোভকারীদের প্রাথমিক কৌশলকে প্রতিফলিত করে।এই আন্দোলন ১৯৭৩ সালে উত্তরাখণ্ডের (তৎকালীন উত্তর প্রদেশের অংশ) হিমালয় অঞ্চলে উদ্ভূত হয়েছিল এবং দ্রুত সমগ্র ভারতীয় হিমালয় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলন চলতে থাকলে, প্রতিবাদগুলি আরও প্রকল্প-ভিত্তিক হয়ে ওঠে এবং অঞ্চলের সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শেষ পর্যন্ত “হিমালয় বাঁচাও” আন্দোলনে পরিণত হয়। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে, বহুগুণা হিমালয় জুড়ে ৫,০০০ কিলোমিটার (৩,১০০ মাইল) পদযাত্রা করে আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন ১৯৮০-এর দশক জুড়ে অনেক প্রতিবাদ ভাগীরথী নদীর উপর তেহরি বাঁধ এবং বিভিন্ন খনির কার্যক্রমের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যার ফলে কমপক্ষে একটি চুনাপাথর খনি বন্ধ হয়ে যায়। ওই অঞ্চলে দশ লক্ষেরও বেশি গাছ লাগানো হয়েছিল। ২০০৪ সালে হিমাচল প্রদেশে কাঠ কাটার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় চিপকো আন্দোলন ফের শুরু হয় কিন্তু পুনর্বহালে ব্যর্থ হয়।