লোকসভায় পেশ বিতর্কিত ‘দ্য ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪’। আর তা নিয়েই আচমকা উত্তাপ বসন্তের দিল্লিতে। বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে সরকার এবং বিরোধী শিবির। বিলের বিরুদ্ধে একযোগে ভোট দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। অন্য দিকে, কিছুটা হলেও নিশ্চিত দেখাচ্ছে বিজেপি শিবিরকে। সদস্যদের ওই সময় লোকসভায় হাজির থাকার হুইপ জারি করেছে পদ্মশিবির।
মঙ্গলবারই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ‘বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটি’র বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকে ওয়াকফ বিল নিয়ে তর্ক চরমে ওঠে। সরকার বিল নিয়ে ৪ ঘণ্টার আলোচনার প্রস্তাব দেয়। বিরোধীদের দাবি ছিল ১২ ঘণ্টা আলোচনা করতে হবে। শেষে ঠিক হয় ওয়াকফ নিয়ে ৮ ঘণ্টা আলোচনা হবে। মণিপুর ও আধার কার্ডের এপিক নম্বর নিয়ে আলোচনার দাবি ছিল বিরোধীদের। কিন্তু অভিযোগ সেই দাবি মানা হয়নি। তাই প্রতিবাদে বিরোধীরা বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে।
বস্তুত, গত ৮ অগাস্ট বিরোধীদের বাধা সরিয়ে লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটিকে অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তার বিরোধিতায় একজোট হয়েছিলেন বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ৪৪টি সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের উপর পূর্ণ সরকারি কর্তৃত্ব কায়েম করাই লক্ষ্য মোদী সরকারের। তা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। তার পর, বিল চলে যায় জেপিসিতে।
৩১ সদস্যের জেপিসি বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কার্যত একতরফা ভাবে গত ৩০ ডিসেম্বর ১৪টি সংশোধনী-সহ বিলটি সংসদে পেশ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে। সরকার পক্ষের তরফে ২৩ এবং বিরোধীদের তরফে ৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাব কমিটিতে জমা পড়েছিল সরকার পক্ষের সাংসদদের আনা ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হলেও বিরোধীদের সবক’টি সংশোধনী প্রস্তাবই খারিজ হয়।
এনডিএ জোটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম দল টিডিপি ও জেডিইউ বিল নিয়ে কী আবস্থান নেবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। যা বুকে বল যুগিয়েছিল বিরোধীদের। মনে করা হয়েছিল, ওয়াকফ নিয়েই মোদীর সঙ্গে কাজিয়া লাগবে চন্দ্রবাবু, নীতীশের। কিন্তু বিরোধীদের কার্যত হতাশ করে মঙ্গলবার রাতেই টিডিপি এবং জেডিইউ সংসদীয় দল ওয়াকফ বিল সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রত্যাশিত ভাবেই অধিবেশনে হৈ-হল্লা হবে, কিন্তু মোদী সরকারের আপাতত বিপদ কেটেছে বলেই অনুমান। বুধবার লোকসভায় ভালয় ভালয় ওয়াকফ বিল পেশ হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় আনা হতে পারে এই বিলটি।
