ভারত সরকারের দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর অবশেষে ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলায় অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে আনা হচ্ছে ভারতে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রের খবর অনুযায়ী সকল আইনি পথ শেষ করে তাকে একটি বিশেষ বিমানে করে ভারতে আনা হচ্ছে। বিমানটিকে রিফুয়েলিংয়ের জন্য থামতে হবে এবং এটি বুধবার রাত বা বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ ভারতে পৌঁছতে পারে।এর ফলে ভারত সরকারের দীর্ঘদিনের চেষ্টার জয় হতে চলেছে।
২০০৮ সালের মুম্বইয়ে হওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার অন্যতম মূলচক্রীকে ভারতে আনার পথ পুরোপুরি খুলে যাওয়ার পিছনে রয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত, যেখানে তারা রানা’র ভারতের হাতে প্রত্যার্পণ স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করে দেয়। সোমবার আদালতের আদেশে বলা হয়, “প্রধান বিচারপতির কাছে উত্থাপিত আবেদন এবং আদালতে পাঠানো আবেদনটি খারিজ করা হল।” ফলে এখন আর কোনও আইনি জটিলতা ছাড়াই তাকে ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে। রানা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি আপৎকালীন পিটিশন দায়ের করে, যাতে বলা হয়, যতদিন না তার হ্যাবিয়াস কর্পাস পিটিশনের শুনানি সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন যেন তাকে ভারতে পাঠানো না হয়।তবে বিচারপতি এলেনা কাগান সেই আবেদন আগেই খারিজ করে দেন। এরপর রানা চান তার আবেদন যেন সরাসরি চিফ জাস্টিস জন রবার্টসের কাছে পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্ট ৪ এপ্রিল সেই আবেদন ‘কনফারেন্স’-এর জন্য তালিকাভুক্ত করে। অবশেষে ৭ এপ্রিল প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়—রানার আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করা হয় যে, তাহাউর রানা ভারতের মাটিতে বিচার মুখোমুখি হবেন। এর আগে, রানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাৎক্ষণিক বিপদের মুখে থাকা অ্যাবডোমিনাল অ্যর্টিক অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত।তিনি পারকিনসন্স রোগে ভুগছেন, যার সঙ্গে রয়েছে কগনিটিভ অবনতি, এবং তার মূত্রাশয়ে ক্যানসারের সম্ভাব্য টিউমার রয়েছে। তিনি দাবি করেন, ভারতে বিচারাধীন থাকার মতো দীর্ঘদিন তিনি বাঁচবেন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভারতে তিনি জাতীয়তা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিদ্বেষের কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন।
তাহাউর রানা লস্কর-ই-তইবা এবং পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী ২৬/১১ মুম্বই হামলার ছক কষার কাজে সে সরাসরি জড়িত ছিল। রানা-ই সেই ব্যক্তি, যে ডেভিড হেডলিকে ভারতে এনে বিভিন্ন জায়গার রেকি করিয়েছিল, যার ওপর ভিত্তি করেই হামলার পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়। মার্কিন জুরি আদালত মুম্বই হামলার ঘটনায় তাকে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও, অন্য দুটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেয়। কোভিড পরবর্তী সময়ে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।এরপর তাকে ফের গ্রেফতার করা হয় ভারতের হাতে প্রত্যার্পণের জন্য। রানা ওই প্রত্যার্পণ আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করলেও, শেষ পর্যন্ত সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।
Leave a comment
Leave a comment
