জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁওতে সাধারণ নাগরিকদের উপর হওয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া কূটনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট অনুযায়ী বুধবার বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে যে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসের জবাবে ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে পাঁচটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। সন্ত্রাসহানা ইস্যুতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)-র উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠক।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ইন্দাস বা সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস জল চুক্তিকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন। সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বাতিল করল ভারত।
আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও জনসংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলপথ আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা হল আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত।
পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ
পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা পরিষেবা ও সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াতের সব অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। পাকিস্তানি নাগরিকরা ভারতে আসতে পারবে না, পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাক নাগরিকদের ভারত ছাড়তে হবে।
পাকিস্তান হাইকমিশনে নিযুক্ত সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার
নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে নিযুক্ত সমস্ত সামরিক উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের সামরিক স্তরের কূটনৈতিক যোগাযোগ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল।
পাক হাইকমিশনের কর্মীসংখ্যা কমানো
পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে যে, নয়াদিল্লিতে তাদের কূটনৈতিক মিশনে কর্মীসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনতে হবে। এতে কূটনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়বে।
পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় ইতিমধ্যেই দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর ই তৈবার সংগঠন টিআরএফ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফুঁসছে গোটা দেশ। এই অবস্থায় এই সিদ্ধান্তগুলির মাধ্যমে ভারত কড়া বার্তা দিল যে, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসের কোনওরকম ছাড় নেই। কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবার কেবল কথায় নয়, কার্যকর পদক্ষেপে জবাব দেওয়া হবে।