দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি
এবার চন্দননগর থেকে গ্রেফতার পাকিস্তানি নাগরিক। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ১৯৮০ সালে ভারতে এসে অবৈধভাবে পাকাপাকিভাবে ভারতেই থেকে যান ফাতিমা বিবি। কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পরই কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়তে বলেন। এবার সারা দেশ জুড়ে পাকিস্তানি নাগরিকদের খুঁজে বার করার কাজ শুরু হয়। তারপরই চন্দননগরের কুটির মাঠ সংলগ্ন এলাকায় ফতেমা বিবি নামে ৬০ বছর বয়স্ক ওই পাকিস্তানি নাগরিকের সন্ধান মেলে। অবৈধভাবে প্রায় ৪৫ বছর ধরে ভারতবর্ষে বাস করার জন্য শনিবার ওই পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেফতার করে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে বাবার সঙ্গে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে বেড়াতে আসেন ফতেমা বিবি। এর দুই বছর পর ১৯৮২ সালে চন্দননগরের বেকারি মালিক মুজঃফর মল্লিককে বিয়ে করে পাকাপাকি ভাবে ভারতে থেকে যান ফতেমা। বর্তমানে ওই দম্পতির দুই কন্যা সন্তানও বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অন্যত্র বসবাস করেন। রহস্যজনক বিষয়টি হল ফতেমা ভারতবর্ষে আসার এক বছর বাদে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের খাতায় নিখোঁজ বলে লিপিবদ্ধ হয়। বর্তমানে কুঠির মাঠের পিছনে স্বামী মুজঃফর মল্লিক- এর দোতলা বাড়িতেই পাকাপাকিভাবে বাস করতেন ফাতেমা।
এদিকে দীর্ঘ ৪৫ বছর বাদে ফতেমা বিবিকে একজন বিদেশী নাগরিক হিসেবে গ্রেফতার করায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ফতেমার প্রতিবেশীদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো। তাই এলাকার মানুষের দাবি আইনি জটিলতা কাটিয়ে তাকে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ফতেমা বিবির কোনো আত্মীয়-স্বজন পাকিস্তানে নেই। সকলেই ভারতবর্ষে বসবাস করেন। এমতাবস্থায় দীর্ঘ ৪৫ বছর বাদে পাকিস্তানে ফিরে গেলে তার ঠিকানা কোথায় হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত গোটা পরিবার। ফতেমার স্বামী ও মেয়েরা জানিয়েছেন যে তাদের পূর্বপুরুষরা হুগলির নালিকুলে থাকতেন। সেখানেই ফতেমার জন্ম। পরে কাজের সূত্রে ফতেমার বাবা পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে গেলে সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে যান। এরপর ১৯৮০ সালে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে মেয়েকে সঙ্গে করে ভারতে বেড়াতে আসেন। বর্তমানে ৬০ বছর বয়স্কা ফতেমা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা অত্যন্ত জরুরী। এর জন্য চিকিৎসাও চলছে। এমতাবস্থায় তার স্বামী জানান তার স্ত্রী চন্দননগর কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। তার আধার ও প্যান কার্ড আছে। বহুদিন আগেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানো হলেও এতদিনেও নাগরিকত্ব পান নি। কিন্তু ১৯৮০ সালে ভিসা নিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতবর্ষে আসার পর একজন বিদেশী নাগরিক কি করে নিখোঁজের খাতায় নথিভুক্ত হলেন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment