জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) যেন আবারও পরিণত হয়েছে বারুদের সীমানায়। ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর পর থেকেই একটানা গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। সেই হামলায় শহীদ হয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমার। পুঞ্চ সেক্টরে দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি সেনার মর্টার শেলে তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে মৃত্যু হয় তাঁর।
ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমারের মৃত্যু শুধু সেনা বাহিনী নয়, গোটা জাতির জন্যই এক অপূরণীয় ক্ষতি। হোয়াইট নাইট কর্পস তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে, “দেশের জন্য তাঁর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ফিরে তাকাতে হয় ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দিকে। কাশ্মীরের পহেলগামে লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসবাদীরা ভারতীয় সেনার উপর হামলা চালায়, যাতে শহীদ হন ২৬ জন জওয়ান। সেই ঘটনার বদলা নিতেই ভারত চালায় ‘অপারেশন সিন্ধুর’। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের অন্তত ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনা অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।
এই অভিযানের পর থেকেই পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর গোলাবর্ষণ শুরু করে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন, আহত অনেক। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে সেনা মোতায়েন।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগও বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, “আমি উভয় দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কে আছি। চাই, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান খুঁজে নিক। যদি কোনওভাবে সাহায্য করতে পারি, আমি থাকব।” একই আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন।
বর্তমানে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের সেনাবাহিনী জবাবি পদক্ষেপে সক্রিয়। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, সেনারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমার ইঙ্গিত এখনও নেই।
শেষমেশ, ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমারের আত্মত্যাগ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সীমান্তের বাস্তবতা কতটা কঠিন। যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে জীবন বাজি রেখে দেশকে রক্ষা করতে হয়, আর রাজনীতির ভুলের খেসারত দিতে হয় সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেই অগণিত জওয়ানকেই।
