ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনার আবহে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে এখন অপারেশন সিঁদুর। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অভিযানে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন বলিউডের একাধিক নামজাদা তারকা। কিন্তু তাঁদের এই অবস্থান যে জনপ্রিয়তার গ্রাফে ধাক্কা দিতে চলেছে, তা হয়তো ভাবেননি তাঁরা নিজেরাও।
মে মাসের ৭ এবং ৮ তারিখে হঠাৎ করেই ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করে বলিউডের একাধিক তারকার। আলিয়া ভাট, অজয় দেবগণ, কার্তিক আরিয়ান, সারা আলি খান, জাহ্নবী কাপুর, এঁরা প্রত্যেকেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পোস্ট বা স্টোরি করেন, ভারতীয় সেনার প্রশংসায় মুখর হন। কিন্তু এর পরপরই তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শুরু হয় ফলোয়ার হারানোর পালা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষ, বিশেষ করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে থাকা ভারতীয় উপমহাদেশের দর্শকরা, এই তারকাদের আনফলো করতে শুরু করেছেন। আলিয়া ভাট একদিনেই হারিয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ফলোয়ার। কার্তিক আরিয়ানের ফলোয়ার কমেছে প্রায় ৬০ হাজার, অজয় দেবগণকে আনফলো করেছেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
এখানেই শেষ নয়। গত সপ্তাহে ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে পাকিস্তানের কয়েকজন অভিনেতা-শিল্পীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। সেই ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং আরব দেশগুলো থেকে বসবাসকারী প্রবাসীরা বলিউড সেলেবদের বয়কট করতে শুরু করেছেন বলে মনে করছেন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা।
কেন এই ফলোয়ার হ্রাস এত গুরুতর? কারণ একটাই, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার সংখ্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে তারকাদের ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট চুক্তি ও অর্থ উপার্জনের পথ। একাধিক সংস্থা তাঁদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বাছেন সেই তারকার অনলাইন ‘রিচ’ দেখে। ফলে ফলোয়ার কমা মানেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং চুক্তিতে।
এদিকে, টলিউডের ক্ষেত্রেও বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক দর্শক পশ্চিমবঙ্গের তারকাদের ফলো করেন। ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে সে দেশের নেটিজেনদের মনোভাব কেমন থাকে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
টলিপাড়ার একাংশের মতে, গত এক বছরে ইনস্টাগ্রামে বেশিরভাগ তারকার ফলোয়ার বৃদ্ধি প্রায় স্থবির। কাজেই ফলোয়ার সংখ্যা যদি হঠাৎ করে কমে যায়, তাহলে আগামী দিনে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে।
তাই এখন একটাই প্রশ্ন, দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে খোলাখুলি মতামত দেওয়া কি ভবিষ্যতে বলিউড বা টলিউড তারকাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে? এখন সময় চিন্তা করার, কোন বিষয়ে মুখ খুলবেন, আর কোন বিষয়ে নীরব থাকাই শ্রেয়, সেটাই বুঝে চলতে হবে তারকাদের।