সুনীতা ঘোষ
যখন শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশেই ধ্বংস হয়, তখন বোঝা যায়, একজন প্রকৃত নেতার দূরদৃষ্টি কেমন হওয়া উচিত। ভারত যখন নিজের আকাশসীমায় নিখুঁতভাবে ধ্বংস করছে পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র, তখন গোটা দেশ বিস্ময়ে তাকিয়ে, সেনার সাহস আর প্রযুক্তির শক্তিতে গর্ব অনুভব করেছে। কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন, এই লৌহবর্ম তৈরির বীজ বপন করেছিলেন বছর দশেক আগে, এক নিরহংকারী, নীরব অথচ দূরদর্শী মানুষ, মনোহর গোপালকৃষ্ণ পারিকর।
গোপনে গড়া এ যেন এক মহাকাব্য রচনা! পাকিস্তান যখন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারতের আকাশে, তখন সেই আঘাত মাঝ আকাশেই থেমে যাচ্ছে। এ যেন যেন এক অদৃশ্য ঢাল, শত্রুর আঘাতকে থামিয়ে দিচ্ছে ধ্বংসাত্মক মুহূর্তের আগেই। এই ঢালের নাম, S-400 ট্রায়াম্ফ। আর এই ঢাল তৈরির কারিগর? ভারতের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, গোয়ার সাদামাটা মুখ্যমন্ত্রী, এক প্রকৌশলী নেতা মনোহর পারিকর।
২০১৫ সাল, পশ্চিমা বিশ্ব তখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আমেরিকা হুমকি দিচ্ছে CAATSA-র অধীনে ভারতকে নিষেধাজ্ঞার। সেই সময় ভারতের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে S-400 কেনা ছিল নিঃসন্দেহে এক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু মনোহর পারিকর পিছিয়ে যাননি। তিনি প্রযুক্তি বোঝেন, দেশের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। নিজের প্রকৌশলগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে, তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু-র সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা করেন। তার পর নিজের মন্ত্রককে নির্দেশ দেন, S-400 চুক্তি এগিয়ে নিতে হবে।
IIT বোম্বের স্নাতক এই নেতা কোনো চাতুর্যপূর্ণ বক্তা ছিলেন না, ছিলেন না ক্যামেরার সামনে আত্মপ্রচারকারী। বরং তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম, একজন এমন নেতা, যিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেশের নিরাপত্তাকে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত গড়ে দিলেন।
২০১৭ সালে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদ থেকে সরে গিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন নিজের রাজ্য গোয়ায়। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কূটনৈতিক কাঠামো ও প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন এতটাই শক্তিশালী ছিল, যে ২০১৮ সালে নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৪০,০০০ কোটির S-400 চুক্তি সই করে রাশিয়ার সঙ্গে।
বিশ্বের সেরা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি,আজ ভারতের হাতে!
S-400 ট্রায়াম্ফ এমন একটি ব্যবস্থা যা একসঙ্গে ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, ৭২টি ক্ষেপণাস্ত্র চালাতে পারে, ৩০০টি লক্ষ্য ট্র্যাক করতে পারে ৬০০ কিমি দূর থেকে। এবং সর্বোচ্চ ৪০০ কিমি দূরের হুমকিও এক মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে। চীন ইতিমধ্যেই তাদের সীমান্তে এই ব্যবস্থা বসিয়েছে। ভারত যখন ২০২১ সালে তিনটি S-400 রেজিমেন্ট মোতায়েন করে, তখন পারিকরের সেই সিদ্ধান্ত এক বিশাল সাফল্যে পরিণত হয়। আজ তাঁর দৃষ্টিই রক্ষা করছে ভারতের আকাশ।
যখন আমরা আকাশে দেখি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাঝপথে, তখন বুঝি, এই দৃশ্য শুধু প্রযুক্তির জয় নয়,এ এক মানুষের ভাবনার ফসল। মানোহর পারিকর ছিলেন সেই মানুষ, যিনি রাজনীতি করেন নি প্রচারের জন্য, কাজ করেছেন ভবিষ্যতের জন্য। গোয়ার অলিতে-গলিতে যিনি স্কুটারে ঘুরতেন, তিনিই আজ ভারতের আকাশের পাহারাদার।
