প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রমী কাজ করে নজর কাড়তে পছন্দ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাত্র কয়েক মাস ক্ষমতার চেয়ারে বসেই মধ্যপ্রাচ্যের তিন তেলসমৃদ্ধ ও ধনী দেশ সফরে গিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই ট্রাম্পের প্রথম বড় আকারের বিদেশ সফর। আজকের যুগে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রথাগত প্রথম সফরের গন্তব্য যখন মেক্সিকো, কানাডা বা ব্রিটেন সেখানে ট্রাম্প সেই প্রথা ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন কেন? প্রথা ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ট্রাম্প বর্তমান সময়ে ওই দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে স্বীকার করে তার লাভ ওঠাতে চাইছেন বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এর পর তিনি কাতার ও আরব আমিরশাহীতেও যাবেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য ওই তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করা।
অথচ ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর সৌদির সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেঁকেছিল। জো বাইডেন ২০১৯ সালে খাশোগি হত্যার পর সৌদি আরবকে ‘পার্থিব মঞ্চে একঘরে’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানির দিক থেকে সৌদি আরবের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়।ওয়াশিংটনও কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়। এর পরেই ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাইডেন যুবরাজের সঙ্গে দেখা করে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরব না হয়ে এক ‘ফিস্ট বাম্প’ দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকের সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে আমেরিকার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে এক সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উদ্দেশ করে এক ব্যতিক্রমী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “মোহাম্মদ, আপনি রাতে ঘুমান তো? কীভাবে ঘুমান? কী অসাধারণ কাজ! কেউ কেউ আমাদের মতো সারারাত … ঘুমায় না… ‘কীভাবে আরও ভালো করব?’ এই চিন্তায় থাকে।” বাইডেনের মত ট্রাম্পও তাঁর বক্তব্যে সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন যে এই ঘটনা কেবল দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক নতুন সমীকরণকেও সামনে আনছে যেখানে মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।অনেকের অভিযোগ মধ্যপ্রাচ্যে ধনকুবের ট্রাম্পের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ আরও কয়েকজন। এ সফরের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্যিক চুক্তি সই। বিবিসি জানাচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলোয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সেটা ট্রাম্পের বিশেষ অর্জন হবে। পাশাপাশি, দেশে ফিরে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সাফল্যের কথাও প্রচার করতে পারবেন। গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ অঙ্ক বেড়ে এক ট্রিলিয়ন ডলার হবে।
Leave a comment
Leave a comment