সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
মিড ডে মিলে বাংলার পড়ুয়াদের সংখ্যা বিপুল হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রের এক রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ৫০ শতাংশ পড়ুয়াই গত শিক্ষাবর্ষে মিড ডে মিল নেয়নি। কেন এই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া মিড ডে মিল নেয়নি তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কেন এই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া মিড ডে মিলের আওতার বাইরে তা নিয়ে আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে রাজ্যের থেকে জবাব চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ সালে পিএম পোষণ শক্তি যোজনায় নাম নথিভুক্ত করেছিল ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ১৪৬ জন পড়ুয়া। তবে এর মধ্যে মাত্র ৭৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৯৪৬ জন মিড ডে মিলের সুবিধা গ্রহণ করেছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলাগুলিতে মিড দে মিল না নেওয়া নথিভূক্ত পড়ুয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । এখানে নাম নথিভুক্তকারী ছাত্র ছাত্রীদের
অর্ধেকেরও কম মিড ডে মিলের সুবিধা গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রের রিপোর্ট দেখিয়েছে, ২০২৩-২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫-২০২৬ সালে প্রায় ১০ লক্ষ পড়ুয়া মিড ডে মিলের সুবিধা নেয়নি। তথ্য বলছে প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ যোজনার অন্তর্গত এই প্রোগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলায় ২০২৪-২৫ সালে নথিভুক্ত আছে এমন চল্লিশ শতাংশেরও বেশি পড়ুয়া মিড ডে মিলের সুবিধা গ্রহণ করেনি। যার মধ্যে কোচবিহার সবথেকে নিচে। যেখানে ৪৬ শতাংশ পড়ুয়া মিড ডে মিল গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ মিড ডে মিলের সুবিধা নেয়নি ৫৪ শতাংশ পড়ুয়া। এই প্রবণতাকে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র।প্রোগ্রাম অ্যাপ্রুভাল বোর্ড ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছে যে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত রাজ্যের মিড ডে মিলের স্কুলগুলির ক্ষেত্রে ভর্তি সংখ্যা ৪.০১ লক্ষ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫-২৬ সালের এই ভর্তির সংখ্যা আরও ৬ লক্ষ হ্রাস পেয়েছে যা যথেষ্ঠ উদ্বেগপূর্ণ। ইতিমধ্যে ভারত সরকারের স্কুল এবং সাক্ষরতা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এনিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে এই প্রকল্পে প্রোগ্রাম অ্যাপ্রুভাল বোর্ড তহবিল তছরূপের অভিযোগও তুলেছে। একাধিক অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছে তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এই প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করে যে সংস্থাগুলি এবং পুরসভা, কর্পোরেশন, একক নোডাল এজেন্সি অ্যাকাউন্টের বাইরে তহবিল জমা রাখছে। রাজ্যকে অবিলম্বে এই তহবিল স্থানান্তর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভারত সরকারের নির্দেশিকা লঙ্ঘন এবং দেরির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে পিএবি। তবে মিড ডে মিল প্রকল্পের আওতায় পড়ুয়াদের পুনরায় অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরে পিএম পোষণের আওতায় যথাক্রমে ৭৮ শতাংশ এবং ৭৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী ছিল। কিন্তু উচ্চ প্রাথমিকে তা কমে ৫৮ শতাংশতে দাঁড়িয়েছে।
মিড ডে মিলে এত বিপুল পরিমাণে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার কমে যাওয়ার কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের স্কুল শিক্ষা বিভাগের বিদ্যালয়গুলিতে স্কুলছুট বা ড্রপ আউটের হার ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষত উচ্চ প্রাথমিক বিভাগে। মিড ডে মিলের পড়ুয়া কমার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় কারণ হতে পারে।
এই ইস্যুতে একযোগে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, “৫০ শতাংশ বাচ্চা মিড ডে মিল খাচ্ছে না। মিড ডে মিল প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা দেয়, তার ৪ হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। রাজ্য খরচই করেনি। সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কী হচ্ছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।” অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকেও কাগজের কাটিং-সহ আমার বক্তব্য পাঠিয়েছি। তৃণমূলের লোকেরা মিড ডে মিলের চাল চুরি করছে। ১০০ শতাংশ দেখিয়ে চাল নিচ্ছে। আর ৫০ শতাংশ চাল রান্না হচ্ছে।”