শিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তনের পথে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সম্প্রতি একটি নির্দেশ জারি করে পাঁচ হাজারের বেশি সরকারি স্কুল বন্ধ করার কথা জানানো হয়েছে। সে রাজ্যের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয় এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০-এর নিচে, এমন সব সরকারি বিদ্যালয়গুলিকে আশেপাশের স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে। এই স্কুলগুলোকে বিলয় বা ‘মার্জ’ করে দেওয়া হবে।
সরকারের এই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে শিক্ষকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। সরকারি সিদ্ধান্তকে শিক্ষার অধিকার আইনের পরিপন্থী এবং শিক্ষকদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি বলে দাবি করেছে বহু শিক্ষক সংগঠন। কিন্তু কী ভাবে ‘মার্জ’ বা মিশিয়ে দেওয়া হবে স্কুলগুলিকে? যোগী রাজ্যে বুনিয়াদি শিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব দীপক কুমার জানিয়েছেন, যে সব স্কুলে ছাত্রসংখ্যা ৫০-এর কম, সে গুলিকে কাছাকাছি অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে। উত্তর প্রদেশ সরকার জানিয়েছে, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্নত পরিকাঠামো ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘মুখ্যমন্ত্রী অভ্যুদয় কম্পোজিট স্কুল’ খোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এই স্কুলে থাকবে স্মার্ট ক্লাস, কম্পিউটার রুম, লাইব্রেরি, ওয়াই-ফাই, খেলার মাঠ, ওপেন জিম, মিড-ডে মিল কিচেন-সহ আধুনিক সব সুবিধা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষার মানোন্নয়নই সরকারের লক্ষ্য হলে স্কুল বন্ধ করার কী দরকার? পক্ষান্তরে, স্কুল বন্ধ করে আদৌ শিক্ষার মানোন্নয়ন করা সম্ভব কি?
তবে এতগুলো স্কুল মার্জ হলে কিংবা বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকদের চাকরি ও নতুন নিয়োগে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। শুধু লখনৌতেই ৪৪৫টি স্কুল ‘মার্জ’ হওয়ার সম্ভাবনা। স্কুল মার্জের ফলে সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের অন্যান্য শূন্যপদে স্থানান্তর করা হতে পারে। ফলে নতুন করে যে ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল, তা আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রতিবাদে নেমেছে সে রাজ্যের শিক্ষক সংগঠন। উত্তরপ্রদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি সুশীল কুমার পাণ্ডে জানান, “এটি শিশুদের অধিকার ও শিক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি, না হলে আন্দোলন এবং আদালতের দ্বারস্থ হব।” সরকারের সিদ্ধান্তকে স্কুলগুলির বেসরকারীকরণের প্রথম ধাপ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য শিক্ষক নেতারাও।