ইডি অফিসার সেজে দেড় কোটি টাকার প্রতারণা! প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা জিন্নার আলির বাড়িতে হানা দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আজ বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি টিম জিন্নার পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ক্ষেমতা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে শুরু হয় তল্লাশি। একই সঙ্গে তাঁর নিউটাউনের বাড়িতেও তল্লাশি চলে। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কয়েকটি বাড়িতেও একযোগে তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ তল্লাশি শেষে নিউটাউনের বাড়ি থেকে জিন্না আলিকে আটক করা হয়েছে। ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তৃণমূল নেতার একটি বিলাসবহুল গাড়িও। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, জিন্নার আলির এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। মন্ত্রী ও বিধায়কদের খুবই ঘনিষ্ঠ। ফলে জিন্নার আলি ইডির হাতে আটক হয়েছে এই খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। শুরু হয় জোর রাজনৈতিক তরজা। কড়া ভাষায় তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। মন্ত্রী, বিধায়কদের সঙ্গে জিন্নার ছবি প্রকাশ্যে এনে শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ বিজেপির। এই প্রসঙ্গে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “জিন্নার আলির মত ব্যক্তিরা তৃণমূলের সম্পদ। ভোট আসলে জিন্নার আলির মতো ব্যক্তিরা তৃণমূলকে মোটা অঙ্কের ফান্ডিং করে থাকে’। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূলের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের সাহায্যে রাজ্য বিধানসভা থেকে শুরু করে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জিন্নার অবাধ যাতায়াত ছিল’।
যদিও বিজেপি নেতার এহেন অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর দাবি, বিধায়ক, নেতা কিংবা মন্ত্রীদের সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলে। তার মানে এটা নয়, ছবি তোলা ওই ব্যক্তির করা কোনও অপকর্মের সঙ্গে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা যুক্ত। অন্যদিকে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জিন্নার আলি নিজেকে ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি ট্রাফিকিং কমিটির’ চেয়ারম্যান বলে দাবি করতেন । যদিও সেটা আসলে একটি এনজিও সংস্থা।
আর সেটিকে ব্যবহার করেই তোলাবাজি চলত বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, জিন্নার আলির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জানিয়েছেন এক বালি কারবারির। তাঁর অভিযোগ, জিন্নার নিজেকে ইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে দেড় কোটি টাকা আদায় করে। এমনকী একাধিকবার হুমকি পর্যন্ত সে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওই বালি কারবারির। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত তাঁকে দৌড় করানো হয় বলে অভিযোগ। আর এই অভিযোগ পাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
খোদ দিল্লি থেকে বিশেষ তদন্তকারী দল এদিন শেখ জিন্নার আলির ক্ষেমতা গ্রামের বাড়ি সহ আরও পাঁচ জায়গায় তল্লাশি চালায় বলে খবর। কয়েকঘন্টা ধরে চলে এই তল্লাশি অভিযান। আর তাতে একাধিক নথি সহ দামি একটি চারচাকা গাড়ি ইডি আধিকারিকরা বাজেয়াপ্ত করেন বলে জানা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, রায়নার ক্ষেমতা গ্রাম থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, নিউটাইন, রাজারহাট প্রভৃতি জায়গায় জিন্নার আলী যে সব বাড়ি রয়েছে, সেগুলির আর্থিক উৎস খতিয়ে দেখছেন ইডি আধিকারিকরা।
কীভাবে উত্থান এই তৃণমূলনেতার?
রায়নার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মাত্র আড়াই বিঘা জমি আর কুড়ে ঘর ছিল জিন্নার আলির সম্পদ। কিন্তু শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে সক্ষতা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই ব্যক্তির কথায়, কয়েক বছরে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় সে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পরেই রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক সহ বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজ, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, তৃণমূল নেতা কাজল শেখ সহ একাধিক নেতার সঙ্গে জিন্নার আলির একাধিক ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।