বলা হয়, যে কোনও শিল্পকর্ম সমসাময়িক সমাজের দর্পণ। এ বার সেই সমাজের জন্যই এক বিশেষ দর্পণ তুলে ধরতে চলেছেন দুই পরিচালক, তা ভূতের গল্পের মোড়কে। ছবির নাম ‘পরী মণি’। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে তনুশ্রী চক্রবর্তীকে। এ ছাড়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন দেবরাজ ভট্টাচার্য, রজতাভ দত্ত, বিশ্বজিৎ দাস প্রমুখ। সম্প্রতি ঘোষণা হল এই নতুন ছবির। ভৌতিক ভাষার আড়ালে কোন বার্তা দেবে এই ছবি? কেমন ভাবেই বা সাজানো হয়েছে ছবির গল্প?
ভৌতিক ভাষার আড়ালে লুকিয়ে এক কোমল সামাজিক বার্তা – এই কথাটিই ‘পরী মণি’ ছবির প্রতিটি দৃশ্যে প্রতিধ্বনিত হবে। এই সিনেমাটি একটি সামাজিক হরর ঘরানার গল্প, যেখানে ভয়, ভালবাসা, অপরাধবোধ, দায়িত্ববোধ এবং জীবনের হাহাকার একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পরী, এক কিশোরী মেয়ে । গল্পের মূল ঘটনাটি ঘটে এক সাধারণ ঘরের মধ্যে, কিন্তু সেই ঘরের দেওয়াল যেন লুকিয়ে রেখেছে এক অসাধারণ অতীতকে — এক মা, এক কন্যা এবং সেই শিশুর অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
এই সিনেমা তুলে ধরে এক মায়ের মানসিক বিপর্যয়, নারীর চেতনার বিকৃতি এবং সমাজের নীরব নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহ। ‘পরী মণি’ শুধু একটি সিনেমা নয় — এটি এক প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর, এক নিঃশব্দ আর্তনাদের প্রতিচ্ছবি, যা ভয়ের ভাষার মধ্যে দিয়েও মানুষের অসহায়তার বিষের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। ছবির পরিচালনার দায়িত্বে সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী ও সৌভিক দে।
গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী। তিনি এই ছবি সম্পর্কে বলেন, ‘”পরী মণি” আমার জন্য একটি বিশেষ ছবি। এটি একটি হরর-থ্রিলার সিনেমা। আমার চরিত্রটির অনেকগুলো রং আছে। এর আগে যা যা কাজ করেছি তার থেকে নিঃসন্দেহে এই ছবি আলাদা। গল্পটা দারুণভাবে গাঁথা হয়েছে। আমরা ছবিটা শ্যুট করেছি একটি অনবদ্য প্রাকৃতিক লোকেশনে। রনি দা অসাধারণ কাজ করেছেন। শিশুটিও দুর্দান্ত – এক দারুণ আবিষ্কার। ওর সঙ্গে কাজ করে খুবই ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিচালকদ্বয় জানেন তাঁরা কী চাইছেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার, এবং কাজের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা অসাধারণ। ওঁদের সঙ্গে কাজ করে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে।’
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
দুই পরিচালকের মতে, ‘ছবির কাজ শুরু হয়েছিল একটি হরর গল্প হিসেবে। কিন্তু যখন আমরা গল্গটা তৈরি করতে শুরু করি, তখন বুঝলাম যে এটা আসলে আমাদের সমাজেরই প্রতিফলন। এখানে আসল ভয় অনেক সময় লুকিয়ে থাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দের আবরণের নিচে। এই ছবির মাধ্যমে আমরা অতিপ্রকৃতির শিহরণ ও এক কঠিন সামাজিক বাস্তবতাকে একসঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেছি।
সমাজের সেই বাস্তব ছবি উঠে আসবে সিনেমায় যা প্রায়শই অবহেলিত বা যাকে জোর করে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের উদ্দেশ্য দর্শককে শুধু ভয় দেখানো নয় — বরং দর্শককে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেওয়া, প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করা, তাঁর ভিতরে অস্বস্তির জন্ম দেওয়া। ‘পরী মণি’ এক রহস্যময় গল্প, তবে তার থেকেও বেশি — এটি একটি সতর্কবার্তা, যে আমাদের সবচেয়ে ভয়ের বিষয়গুলো অনেক সময় আমাদের সবচেয়ে কাছের জায়গা থেকেই উঠে আসে।’ চলতি বছরের দীপাবলিতে ছবি মুক্তির কথা।