এজবাস্টনে ইতিহাস গড়ার পর লড়াইটা এ বার হোম অব ক্রিকেটে। বৃহস্পতিবার থেকে ঐতিহাসিক লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামছে ভারত। এজবাস্টনে ৩৩৬ রানে জিতে সিরিজে সমতা ফেরানোর পর শুভমন গিলের দল এই মুহূর্তে টগবগ করে ফুটছে। ভারত অধিনায়ক এখন আত্মবিশ্বাসের এতটাই তুঙ্গে যে সাংবাদিক বৈঠকে বসে সটান জানিয়ে দিচ্ছেন, ইংল্যান্ডে আজ পর্যন্ত যতগুলি ভারতীয় দল টেস্ট খেলতে এসেছে, সবার মধ্যে তাঁর এই দলটিই শ্রেষ্ঠ। গিলের এ হেন মন্তব্য নিয়ে তর্ক বিতর্ক থাকবে খুব স্বাভাবিকভাবেই। তবে ব্যাটে বলে বার্মিংহামে যে পারফরম্যান্স টিম ইন্ডিয়া দেখিয়েছে তাতে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলে ফেলা যায় যে ক্রিকেটের মক্কায় তাদের নিয়ে প্রত্যাশাটা থাকবে আকাশছোঁয়া।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
এজবাস্টনে জশপ্রীত বুমরাহ্’র অনুপস্থিততে আকাশ দীপ এবং মহম্মদ সিরাজ অভাবনীয়ভাবে জ্বলে না উঠলে ভারত জয় পায় না। বিশেষ করে, আকাশ দীপ। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ জন ইংরেজ ব্যাটারকে ফেরান বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম দেহরি থেকে উঠে আসা ভারতীয় পেসার। মোট ১০ উইকেট পকেটে পুরে স্পর্শ করেছেন চেতন শর্মার ৩৯ বছর আগের রেকর্ড। তবু এসবের পরেও অধিনায়ক গিলের এই অদম্য আত্মবিশ্বাসের মূল চালিকাশক্তি কিন্তু ভারতের বোলিং নয়। সেটা চিরাচরিতভাবে ব্যাটিংই। আরও বিশদে বললে টিম ইন্ডিয়ার মিডল এবং লোয়ার অর্ডারের অবদান।
লিডসে দুই ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে ৪৭১ এবং ৩৬৪। ৫৫০+ এবং ৪৫০+ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। কারণ লোয়ার অর্ডারের ধস। হেডিংলেতে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৪১ রান শেষ ৭ এবং ৩১ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় গিলের দল। সেখানে এজবাস্টনের দুই ইনিংস মিলিয়ে হাজারের ওপর রান করে ব্রিটিশদের পেষার নেপথ্যে ছিল লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংই। প্রথম ইনিংসে একসময় ২১১/৫ হয়ে যাওয়া ভারত ৫৮৭ অবধি পৌঁছল ৭ নম্বরে নামা রবীন্দ্র জাদেজা এবং ৮ নম্বরে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর রুখে দাঁড়ালেন বলেই। অধিনায়ক গিলকে সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি একজন ১৩৭ বলে করেন ৮৯। অন্যজন ১০৩ বলে ৪২।
লিডসে যা ছিল দুর্বলতা। হারের অন্যতম বড় কারণ। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এজবাস্টনে সেটাই হয়ে গেল ব্যাটিংয়ের ইউএসপি। এরপরেও অহঙ্কার করবেন না অধিনায়ক? ভারত যদি প্রথম ইনিংসে ৫৮৭ না করত তা হলে কি সিরাজ-আকাশরা এত দুর্দান্ত বল করেও ছিনিয়ে আনতে পারতেন জয়? মূলতঃ রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েই তো ব্রিটিশদের বধ করেছে টিম ইন্ডিয়া। বোলারদের অবদান একটুও খাটো না করেই বলা যায়, ব্যাংকে পুঁজি ছিল বলেই না এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঝাঁপাতে পেরেছেন তাঁরা। আর পুঁজি জমা হয়েছে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের সৌজন্যেই।
আরও পড়ুন
লর্ডসে নামার তাই আরও একবার বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই হবে শুভমন গিল এবং গুরু গম্ভীরকে। গিলকে মাথায় রাখতে হবে, আত্মবিশ্বাস ভাল। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে অন্ধ হয়ে পড়াটা অচিরেই পতন ডেকে নিয়ে আসে। লর্ডস টেস্টে জোফরা আর্চার এবং গাস অ্যাটকিনসনকে দলে শামিল করেছেন বেন স্টোকসরা। ইংরেজদের বোলিং এ বার অনেকটাই ধারালো। এরই সঙ্গে থাকছে লর্ডসে বিখ্যাত স্লোপি উইকেট। যা কি না একজন মধ্য মেধার বোলারকেও ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে। সুতরাং, সাফ কথা একটাই। ভাল ব্যাটিং করতে হবে। ওভার কনফিডেন্সে ভেসে গিয়ে লিডসের ভুলের পুনরাবৃত্তি করলে চলবে না। কন্ট্রিবিউশনটা আসুক টপ এবং লোয়ার অর্ডার, উভয় থেকেই।