এক বেসরকারি সংস্থার করা জনমত সমীক্ষায় কেরলের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পছন্দের তালিকায় সবার উপরে উঠে এসেছে শশী থারুরের নাম। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বাকিদের চেয়ে শশী থারুরকে বেশি পছন্দ করেছেন কেরলবাসী। সেই সমীক্ষা আবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন শশী নিজে। তাতে এক প্রকার জল ঢেলে দিলেন কেরলে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা কে মুরলীধরণ। সরাসরি কটাক্ষ করলেন শশীকে। লিখলেন “মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের আগে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক যে, তিনি আসলে কোন দলে আছেন”!
শশীকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ প্রশ্নে বৃহস্পতিবার মুরলীধরন বলেন, “সমীক্ষায় কে এগিয়ে আছে তাতে কিছু আসে যায় না। যদি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ইউডিএফ ক্ষমতায় আসে, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী ইউডিএফ থেকে হবেন। তিনি আরো বলেন, এখন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বা এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে আগ্রহী নই। বর্তমানে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হল নির্বাচনে জয়লাভ করা।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
শশীকে তুলোধোনা করে দলের বর্ষীয়ান নেতা বুঝিয়ে দিয়েছেন সমীক্ষা নয় দলের সিনিয়রিটিই প্রাধান্য পাবে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য। তিনি এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, দলের একটি নিয়মকানুন রয়েছে যার ভিত্তিতে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারজন্য কোন সমীক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না। যদি পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে ভাবা তাহলে কংগ্রেসের কেরালা ইউনিটে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন যাদের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ সমীক্ষা ভুলে যান কেৱল মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে ধারে-কাছে নেই শশীর নাম।
শশী যে আগে থেকেই বহু বিষয়ে দলের বিরাগভাজন হয়ে রয়েছেন। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর বিদেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীতির প্রশংসা করে কংগ্রেসের ভেতরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেরলের তিরুঅনন্তপুরম আসনের চার বারের সাংসদ শশী। তারও আগে কেরলের বাম সরকারের শিল্পনীতির প্রশংসা করে কংগ্রেসের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এমনকী বৃহস্পতিবার কার্যত বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে জরুরি অবস্থা নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে থারুরকে। তাই তাঁকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইউটিউবেও জাজবাত, আপডেট থাকুন আমাদের সঙ্গে
আগামী বছর মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই কেরলেও বিধানসভা ভোট। সে রাজ্যে বর্তমানে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এলডিএফ) সরকার। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে কেরল নিয়ে নিরপেক্ষ সংস্থা ‘ভোট ভাইব’-এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নতুন নাম। বলা হচ্ছে বামেদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। আর সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মানুষের সবচেয়ে বেশি পছন্দ শশী থারুর।
শশী সেই সমীক্ষা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও কংগ্রেস নেতৃত্ব আপাতত যে তাঁর কথা ভাবছে না, তা স্পষ্ট। কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেসি ভেনুগোপাল কেরলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। সে কথা শশীরও অজানা নয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, সমীক্ষা তুলে ধরে তিনি আসলে কংগ্রেস নেতৃত্বের উপরই চাপ তৈরি করার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন না হলে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।