ভারতীয়দের লক্ষ করে সাউথইস্ট এশিয়া থেকে সাইবার জালিয়াতি! প্রতি মাসে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা হারাচ্ছে দেশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকার অনলাইন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জালিয়াতি হয়েছে মায়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস এবং থাইল্যান্ড থেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেসন সেন্টারের তথ্য বলছে, এসব প্রতারণা চালানো হচ্ছে এমন সব জায়গা থেকে যেগুলি উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন ঘাঁটি এবং যেখানে বহু ভারতীয়সহ অন্যান্য দেশের মানুষকে পাচার করে কাজ করানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলি চিনা চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই বছরের প্রতারণার পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারিতে প্রতারণার অঙ্ক ছিল ১,১৯২ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৯৫১ কোটি, মার্চে ১,০০০ কোটি, এপ্রিল মাসে ৭৩১ কোটি ও মে-তে ৯৯৯ কোটি টাকা। এই সব ঘটনাগুলির তথ্য সিটিজেন ফিনান্সিয়াল ফাইবার ফর রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর মাধ্যমে উঠে এসেছে।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
সম্প্রতি দিল্লিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কম্বোডিয়া সরকারের প্রতিনিধি। সেখানে কম্বোডিয়ার ভিতরে অবস্থিত জালিয়াতি চক্রগুলোর সঠিক অবস্থান জানাতে অনুরোধ করেছে ভারত সরকার, যাতে তারা অভিযান চালাতে পারে। এখনও পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় এমন ৪৫টি, লাওসে ৫টি এবং মায়ানমারে ১টি প্রতারণা কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই চক্রগুলো মূলত তিন ধরনের সাইবার অপরাধে লিপ্ত, স্টক বা বিনিয়োগ প্রতারণা, ডিজিটাল অ্যারেস্ট এবং কাজ বা ইনভেস্টমেন্ট ভিত্তিক স্ক্যাম। এমনকি অনেক ভারতীয় দালাল রয়েছে যারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষদের কম্বোডিয়া, লাওস বা থাইল্যান্ডে পাঠাচ্ছে। এদের মধ্যে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি থেকে সবচেয়ে বেশি রিক্রুটার চিহ্নিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
সরকারি তদন্তে জানা গেছে, বহু ভারতীয়কে প্রথমে দুবাই, চীন, সিঙ্গাপুর কিংবা ভিয়েতনাম হয়ে কম্বোডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ থাইল্যান্ড বা ব্যাংকক হয়ে এই দেশগুলোতে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে কলকাতা, কেরালা, লখনউ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য থেকে রিক্রুটমেন্টের তথ্যও উঠে এসেছে।
এখন প্রতারণা রোধে একটি ইন্টার-মিনিস্টারিয়াল কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, যা ব্যাঙ্কিং, টেলিকম ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ফাঁকফোকরগুলি চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে বহু জাল সিম কার্ড জালিয়াতির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধ ভারতীয় অর্থনীতির উপর এক বিপজ্জনক ছায়া ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।