প্রত্যেক মাসে ভাবি, এত টাকা রোজগার সত্ত্বেও কোনও টাকাই জমছে না। উপরন্তু ধার করতে হচ্ছে মাসের শেষে। ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না? শুধু আপনি নন, অনেকেই আছেন যাঁদের কাছে এই একই সমস্যা। উপার্জন নিতান্ত মন্দ করেন না, কিন্তু প্রতি মাসে বেতন আসার পরেই যেন উবে যায়। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে আপনার দুই অভ্যাস। এক স্বভাব আর দ্বিতীয় হল দায়বদ্ধতা। তাই বলা হয়, বিচক্ষণতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করতে হয়। অর্থ খরচ করার অজস্র উপায় রয়েছে। দামি গাড়ি এবং বিলাসবহুল বাড়ি থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডেড জিনিসপত্র এবং এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে শো-অফ করার চাপ। যদি এমন কেউ থাকেন, যিনি প্রায়শই অপ্রয়োজনীয়ভাবে বা অযৌক্তিকভাবে অর্থ ব্যয় করেন। তাহলে বলে রাখি, তিনি কোনও দিন ধনী হতে পারবেন না। দারিদ্র্য কখনওই তাঁর পিছু ছাড়বে না।
অর্থের সঠিক মাধ্যমে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ নিয়ে অব্যর্থ ও কার্যকরী নিয়ম ভবিষ্যতে ভালো থাকার উপায়। এ হেন ওয়ারেন বাফেট রুলস অর্থ সম্পর্কে সকলের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে পারে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় উক্তিগুলির মধ্যে একটি হল – এক : কখনও অর্থ হারাবেন না। দুই: কখনও নিয়ম নং ১ ভুলে যাবেন না।
এই নিয়মগুলি কেবল শেয়ার বাজারের জন্য প্রযোজ্য নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি আর্থিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ৯৪ বছর বয়সি কোটিপতি এবং বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইও বাফেট বিশ্বাস করেন যে, যিনি জানেন কোথায় টাকা নষ্ট করা উচিত নয়, তিনিই কেবল অর্থ রক্ষা করতে পারেন। বাফেটের ৫টি সাধারণ কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কথা যদি মনে রাখতে পারেন আপনি কোনও দিন অর্থ কষ্টে ভুগবেন না।
নতুন গাড়ি কেনা : বাফেট এটিকে বেশিরভাগ মানুষের করা সবচেয়ে বড় ভুলগুলির মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেছেন। চকচকে নতুন গাড়ি কেনাকে তিনি বিলাসিতা মনে করেন। শোরুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি নতুন গাড়ির মূল্য হ্রাস পায় এবং বছরের পর বছর এই মূল্য হ্রাস পেতে থাকে এবং মাত্র ৫ বছরেই তা ৬০% পর্যন্ত হ্রাস পায়।
কোটি কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাফেট নিজে ২০১৪ সালের একটি ক্যাডিলাক এক্সটিএসের মালিক এবং এটিও তিনি জেনারেল মোটরস থেকে বিশাল ছাড়ে কিনেছিলেন।
ক্রেডিট কার্ডের সুদ : বাফেট বলেন, ক্রেডিট কার্ড লোভে কেউ আটকে পড়লেই এটি থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যত সহজ মনে হয়, সুদের হার তত বেশি। ভারতে বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক সুদের হার ৩০% এর বেশি, যার অর্থ কেউ যদি ১ লাখ টাকা ব্যালেন্স রাখেন, তাহলে এক বছরে, কেবল সুদে ৩০,০০০ টাকার বেশি দিতে হতে পারে।তিনি একবার বলেছিলেন, “আপনি যদি কোনও শেয়ারের উপর ১৫% বার্ষিক রিটার্ন অর্জনের চেষ্টা করেন, তাহলে কেন ৩৬% সুদের ঋণ নিয়ে নিজেকে পিছিয়ে রাখবেন?”
জুয়া এবং লটারি : বাফেট জুয়া এবং লটারিকে গাণিতিক কর বলে অভিহিত করেন। অর্থাৎ, এমন একটি কর যা যে গণিত এবং যুক্তি বোঝে না তাদের উপর আরোপ করা হয়। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই অভ্যাসগুলি মানুষকে প্রকৃত কঠোর পরিশ্রম এবং বিনিয়োগ থেকে দূরে নিয়ে যায় এবং আশা ও ভাগ্যের মায়ায় আটকে দেয়। লটারির টিকিট কেনা বা ক্যাসিনোতে বাজি ধরা প্রথমে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি আর্থিক শৃঙ্খলা, সঞ্চয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণকে গ্রাস করে।
প্রয়োজনের চেয়ে বড় বাড়ি : বাফেট এখনও ১৯৫৮ সালে যে বাড়িটি কিনেছিলেন সেই বাড়িতেই থাকেন। তিনি বলেন: “একটি বাড়ি থাকার জায়গা, সাফল্যের মাপকাঠি নয়। বড় বাড়ি মানে আরও বেশি কর, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মী এবং দায়িত্ব। যদি আপনার ২টি ঘর দরকার হয়, কিন্তু আপনি কেবল লোক দেখানোর জন্য ৪টি ঘর নিচ্ছেন, তাহলে আপনি প্রতি মাসে কেবল লোক দেখানোর জন্য লাখ লাখ টাকা পোড়াচ্ছেন।”
জটিল বিনিয়োগ পণ্য : বাফেটের নীতি হল: “এমন ব্যবসায় কখনও বিনিয়োগ করবেন না, যা আপনি বুঝতে পারবেন না।” অর্থাৎ, যদি আপনি নিজে কোনও বিনিয়োগ সঠিকভাবে বুঝতে না পারেন – এর পিছনের কৌশল, ঝুঁকি, সম্ভাব্য রিটার্ন, অথবা এর উপর চার্জ, তাহলে এতে বিনিয়োগ করা আপনার কষ্টার্জিত অর্থকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার মতো।”
বাফেটের আর যে কথাগুলি বলেন,
- প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দিতে হবে, লোক দেখানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।
- যে আর্থিক পণ্যগুলি সম্পর্কে ধারণা নেই, সেগুলিতে অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত নয়।
- ব্যয়ের চেয়ে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের উপর বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
নিজেদের আর্থিক পরিকল্পনায় এই অভ্যাসগুলি অন্তর্ভুক্ত করলে, কেবল অর্থের অপচয় এড়ানো যাবে না, বরং ধীরে ধীরে সম্পদ তৈরি করতেও শুরু করা যাবে। বাফেটের আর্থিক জ্ঞান যে কোনও সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য একটি রোডম্যাপের চেয়ে কম নয়।