পুরীর বালঙ্গা এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে শনিবার বিকেলে। আর তার পরেই নতুন করে মোড় নিল এই ঘটনা। ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে নানা তথ্য। ১৫ বছর বয়সি ওই কিশোরী দিল্লির এইমস হাসপাতালে মারা গিয়েছে। প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল, তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবক তাকে কেরোসিন তেল ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। যদিও ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত অনুযায়ী, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনও ব্যক্তি জড়িত নয়।
ঘটনার পর মেয়েটিকে প্রথমে এইমস ভুবনেশ্বরে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে ৭৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় তাকে দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় এয়ারলিফট করে। কিন্তু চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার চেষ্টা করেছিল ও চিকিৎসকরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ জানায়, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্য কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। যদিও গত ১৯ জুলাই কীভাবে ওই কিশোরীর গায়ে আগুন লাগল, সেটাও স্পষ্ট করেননি পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ অনুরোধ করেছে, এই দুঃখজনক সময়ে কেউ যেন কোনও উস্কানিমূলক মন্তব্য না করেন।
এরপর সামনে আসে একটি ভিডিয়ো। ওই ভিডিয়োতে মৃত কিশোরীর বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিল এবং সেই কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি অনুরোধ করেন, কেউ যেন এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রং না দেন।
ভিডিয়োতে তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। সে মানসিক চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার যন্ত্রণা সহ্য করার মতো ছিল না। আমি শুধু বলব, ওডিশা সরকার আমার ও আমার পরিবারের পাশে থেকেছে। দয়া করে কেউ এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না, শুধু ওর আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন।’ তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওড়িশা জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বহু জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঘটনার দিন স্থানীয় বাসিন্দা দুখীশ্যাম সেনাপতি জানিয়েছিলেন, মেয়েটির হাত বাঁধা ছিল এবং সে দৌড়ে তাঁর বাড়ির দিকে আসে। সেই সময় তার শরীর আগুনে পুড়ছিল। দুখীশ্যামের স্ত্রী ও মেয়ে মিলে আগুন নেভান, এবং মেয়েটিকে অন্য জামাকাপড় পরিয়ে দেন। অন্যদিকে প্রাথমিক অবস্থায় মেয়েটি জানিয়েছিল, তিনজন দুষ্কৃতী বাইকে করে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এমনকি মেয়েটির মা-ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যেখানে উল্লেখ ছিল তিন অজ্ঞাত পরিচয় যুবক মেয়েটিকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে এখন পুলিশের বক্তব্য, ওই কিশোরী এবং তাঁর মায়ের প্রাথমিক অভিযোগের সঙ্গে মিলছে না। এই কারণে ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। সত্যিই কী ঘটেছিল, তার উত্তর এখনও অধরাই।