নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত
দিল্লির চেম্বারে বসে থাকা ক্যামেরার লেন্সগুলো তখনও স্থির। ঘড়ির কাঁটা পার হচ্ছে দুপুর। আচমকা এক ঘোষণা, আর যেন ঘূর্ণিঝড় উঠে এল তৃণমূলের লোকসভা দলে! রাজনৈতিক মানচিত্রে তরুণ বজ্রনিনাদ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হল লোকসভায় তৃণমূলের কণ্ঠ। বাংলার রাজনীতিতে এটা শুধুই এক ‘পদোন্নতি’ নয়, এ এক স্পষ্ট সংকেত, যে পরবর্তী দশকের চালক এখন কাঁধে নিলেন তরুণ অভিষেক। সেই ঘোষণার শব্দ যেন কংগ্রেস, বিজেপি, বামের পিছু ফেলে বলে উঠল, এই বাংলার ভবিষ্যৎ হাতে তরুণ নেতৃত্ব।
তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা দলে বড়সড় পালাবদল। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শারীরিক কারণে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোয়, লোকসভায় তৃণমূলের নতুন দলনেতা হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা একদিকে যেমন অভিষেকের উপর দলের বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি, তেমনই তৃণমূলের ভবিষ্যতের রূপরেখাও।
দলনেতার দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক শিবিরে আলোড়ন। কারণ এটা কেবল প্রজন্ম বদলের গল্প নয়, এটা রাজনৈতিক কৌশল বদলের সূচনা। অভিষেক যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন, সংসদে তাঁর স্পষ্ট বক্তৃতা এবং যুক্তির জোরে ইতিমধ্যেই একটি নতুন শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তৃণমূল তাই সোজাসুজি লোকসভায় অভিষেকের কাঁধেই রেখেছে দলের মুখ।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি বড় রদবদল, চিফ হুইপ পদ থেকে সরে গেলেন প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ইস্তফা যেন বিস্ফোরক বার্তা, যেখানে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন দলে অবমাননার। যদিও তৃণমূল এ বিষয়ে কৌশলগতভাবে নীরব। কল্যাণের বিদায় কিছুটা কণ্টকপূর্ণ হলেও, অভিষেকের আগমন যেন রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন আস্থা ও উজ্জীবনের বার্তা।
এই রদবদল থেকে একটাই বার্তা স্পষ্ট তৃণমূল আর শুধু অতীতে দাঁড়িয়ে নেই। তারা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে, হাতে তুলে দিয়েছে তরুণের হাতিয়ার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন শুধু মমতার উত্তরাধিকার বহন করছেন না, তিনি হয়ে উঠছেন এক নতুন কণ্ঠস্বর, এক নতুন চালক।
লোকসভায় তাঁর বজ্রকণ্ঠে এবার বাংলার স্বর আরও বেশি বলিষ্ঠ, আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, আর হয়তো এই পথেই তৈরি হবে আগামী ভারতের রাজনীতির নতুন অধ্যায়।