কমিশনের নির্দেশে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগে চার সরকারি আধিকারিক ও এক ক্যাজুয়াল কর্মীর মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। যে পাঁচ আধিকারিক ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছে নির্বাচন কমিশন, তাদের সাসপেন্ড করে এফ আই আর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। সোমবার দুপুর তিনটের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কার্যকরী রিপোর্ট কমিশনের কাছে জানাতে ডেডলাইন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের এইআরও সুদীপ্ত দাস এবং বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ক্যাজুয়াল কর্মী ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদারকে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত ধরনের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে কমিশনকে জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। যদিও বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী এবং একই কেন্দ্রের এইআরও তথাগত মণ্ডল এবং ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও বিপ্লব সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী তদন্ত করা হচ্ছে এবং প্রাথমিকভাবে সুসংগত পর্যালোচনা করছে রাজ্য প্রশাসন বলে কমিশনকে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
গত ৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে এই চার সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করে এফ আই আর দায়ের করার নির্দেশ দেয়। যত দ্রুত সম্ভব নির্দেশ কার্যকর করার রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। তিন দিন পেরোলেও রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ না করায় দুদিন আগে ফের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে সোমবার দুপুর তিনটের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করার রিপোর্ট পাঠানোর ডেডলাইন বেঁধে দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অবশেষে সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রাথমিক পদক্ষেপের কথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব।
যদিও নির্বাচন কমিশনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কার্যকর রিপোর্ট দিতে গিয়ে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। নির্বাচন কমিশনের সচিবকে লেখা চিঠিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, জেলা স্তরের নিচু তলায় যে সমস্ত সরকারি আধিকারিক কাজ করেন তাদের উপর সরকারি স্তরে ব্যাপক কাজের চাপ যেমন থাকে তেমনি ভোটার তালিকা তৈরির মতো সময়ানুবর্তী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের অতিরিক্ত প্রেশার থাকে। সামগ্রিক পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে নিজেদের অধস্তন কর্মীদের ওপর এই সরকারি আধিকারিকদের নির্ভর করতে হয়। এই ধরনের আধিকারিকদের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বিশদ তদন্ত প্রয়োজন। যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কাজে যথেষ্ট দায়িত্ব ও সততার পরিচয় দিয়ে কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে হঠকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা গোটা সরকারি কর্মীদের কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন মুখ্যসচিব। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে দুই সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হলেও বাকি দুই সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে আরও বিশদে তদন্ত করে ফের কার্যকরী রিপোর্ট কমিশনকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মনোজ পন্থ।