শোলে সিনেমার মুক্তির বছরে তৈরি হয়েছিল অসমিয়া ফিল্ম সোন্তি। সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে ছিলেন শোলে-র জয় অর্থাৎ অমিতাভ বচ্চন। চার্লস ডিকেন্সের অলিভার টুইস্ট-এর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি সাদা-কালো সেই ছবি কিন্তু আজও মুক্তি পায়নি।
শোলের জয় যখন বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে, তখন দিনের আলো না দেখা ক্যানবন্দি সান্তি পড়ে থেকে থেকে ধুলোয় মেশার পথে। কুড়িয়ে বাঁচিয়ে সেখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে একটি ছবি। যেখানে অসমিয়া অভিনেতা দীনেশ দাসের সঙ্গে লড়াইয়ের এক দৃশ্য ফ্রেমবন্দি রয়েছে।
১৯৭৫ সালে ১৫ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল রমেশ সিপ্পির শোলে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে যেটি সুপার ডুপার হিট। সিনেপ্রেমীদের হৃদয়ে তখন আলাদা একটা জায়গা পাকাপাকিভাবে করে নিয়েছে শোলে-র জয় তথা অমিতাভ বচ্চন। অমিতাভের সেই জনপ্রিয়তা অসম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তুলে ধরতেই তৈরি করা হয়েছিল সোন্তি। যে ছবিটির পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন অজয় মিত্র। অসমিয়া ফিল্ম সোন্তিতে শুধু অমিতাভই নন, ছিলেন খ্যাতনামা অভিনেতা ও নাট্যজগতের কিংবদন্তী শম্ভু মিত্রও।
অমিতাভ- দীনেশ এর লড়াই এর দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল কলকাতার টেকনিসিয়ান স্টুডিয়োতে। সেখানে অসমের বাড়ির ধাঁচে তৈরি করা হয়েছিল সেট। বাড়ির ওপরে ছুরি নিয়ে থাকা খলনায়ক ফাগিন-এর সঙ্গে মুখোমুখি সোন্তির ভূমিকায় থাকা অমিতাভ। ফাগিনের চরিত্রটি করেছেন অসমিয়া অভিনেতা দীনেশ দাস।
সংবাদমাধ্যমে সেইসময়কার শ্যুটিং স্মৃতি তুলে ধরেছেন বছর ৮৪-র বৃদ্ধ। বয়স জনিত কারণে এখন শয্যাশায়ী হয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় তাঁকে কাটাতে হয়।
বয়স শরীরে থাবা বসালেও, স্মৃতিতে কিন্তু এতটুকু মরচে পড়েনি অসমের বর্ষীয়ান অভিনেতা দীনেশ দাসের। বিগ বি-র সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি ফাইটিং দৃশ্যটি তাঁর কাছে আজও টাটকা। বলেছেন,
“আমাকে ছুরি দিয়ে বচ্চনকে আক্রমণ করতে হয়েছিল। ৬ মাস আগে আমি আরেকটি অসমিয়া ছবি, “মানব আরু দানব”-এর জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ছুরি চালনা শিখেছিলাম। সেই দক্ষতা সোন্তিতে কাজে লেগেছে,”।
অলিভার টুইস্ট-গল্পে, তরুণ এক অনাথ অপরাধী দলের চক্রে পড়েছিল। সোন্তি ফিল্মেও অনাথ তরুণকে দলে টানেন পকেটমারদের সর্দারের ভুমিকায় থাকা ফাগিন। সোন্তির অনাথ তরুণের নাম ছিল ফটিক চাঁদ। মৃদুল নামে এক তরুণ অভিনেতা যেটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। সোন্তি ছবিটি অসমিয়া, ওড়িয়া এবং বাংলা ভাষায় একই সঙ্গে নির্মিত হয়েছিল।
অমিতাভ বচ্চন তাঁর প্রযোজক বন্ধু টিটো এবং টনি জুনেজার মাধ্যমে “সোন্তি”-তে যোগ দিয়েছিলেন। তখনকার হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের সুপরিচিত প্রযোজক ছিলেন টিটো আর টনি। তাঁদের মাধ্যমে বচ্চনের এই অসমিয়া সিনেমায় যোগদান।
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে আরও কিছু তথ্য সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেছেন দীনেশ দাস। বলেছেন,” পুরোপুরি ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে “সোন্তী”-তে তিনি(অমিতাভ) এভাবেই যোগদান করেছিলেন। মনে আছে ১ সপ্তাহ ধরে তাঁর সাথে শুটিং করেছি,”।
তাঁর কাছে বচ্চন হলেন একজন “মৃদুভাষী ভদ্রলোক”। বলেন, “শোলে”র অভিনেতা তাঁকে “বোম্বে আসতে” বলেছিলেন, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সরকারি চাকরি করা দীনেশ দাস বচ্চনের সেই প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারেননি।
অভিনয় গুণে বচ্চনের মন জিতে নেওয়া দীনেশ দাস কেন বোম্বে যাননি তাও বিস্তারিত ভাবে বলেছেন সংবাদ মাধ্যমে। বলেন “এটা আমার জন্য হয়তো একটা জুয়া হত, কারণ অসমের অনেক অভিনেতাই তখন তাঁদের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য বোম্বে গিয়েছিলেন,কিন্তু প্রায় প্রত্যেককে ফিরে আসতে হয়েছিল”।