সত্যেন পাল
ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (FATF) ধূসর তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য এর আগে নোংরা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল পাকিস্তান। এফএটিএফ (FATF)-এর তালিকা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ২০১৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছিল। সেই সময় পাকিস্তান বলতে শুরু করেছিল, তারা জইশ ই মহম্মদের সদর দফতর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে এসেছে। এমনকী জইশ প্রধান মাসুদ আজাহার, তার ভাই রউফ আজগর, তালহা আল সইফের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে এসেছে বলেও দাবি করেছিল পাকিস্তান। তবে সবটাই ছিল কৌশল। এরপর ২০২২ সালে এফএটিএফ (FATF) পাকিস্তানকে ‘গ্রে লিস্ট’ থেকে বের করে দেয়।
তবে পাকিস্তান সরকারের জঙ্গি-প্রেম কমে যাবে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও JeM অর্থ সংগ্রহের এক নতুন কায়দা বের করেছে। পাকিস্তানি ডিজিটাল ওয়ালেট যেমন ইজি পয়সা, সদা পের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা। পহেলগাম জঙ্গি হামলার পরে ভারত ৭ মে শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। এরপর জইশ সদর দফতর মারকাজ সুভানাল্লাহ্ সহ চারটি জঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্প উড়িয়ে দেয় ভারত। বিরাট চাপে পড়ে পাকিস্তান। তারপর পাকিস্তান সরকার কার্যত সেই ক্যাম্প তৈরির জন্য অর্থ সংগ্রহের ডাক দেয়।
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের JeM অন্তত ৩১৩ টি নতুন ট্রেনিং সেন্টার খোলার জন্য ৩.৯১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। আর সবটাই হচ্ছে পাকিস্তানের ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে। তবে এটা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নয়। এটা মাসুদ আজাহারের পরিবারের নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ওয়ালেট- এর মাধ্যমে করা হচ্ছে।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে প্রক্সি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহের বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। মাসুদের আবেদন সংক্রান্ত চিঠিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে শুধু পাকিস্তানে নয়, পাকিস্তানের বাইরেও এই অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে।
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে-
১) একটা Sadapay অ্যাকাউন্ট চালানো হচ্ছে তালহা আল সইফের নামে। এটা আসলে হরিপুর ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডার আফতাব আহমেদের ফোন নম্বরের সঙ্গে রেজিস্টার করা আছে।
২) মাসুদের ছেলে আব্দুল্লাহ আজহার একটা easypay আ্যকাউন্ট চালাচ্ছে।
ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বলছে, মাসুদের পরিবার অন্তত সাত থেকে আটটি ডিজিটাল ওয়ালেট চালাচ্ছে একইসঙ্গে। প্রতি তিন-চার মাস অন্তর সেগুলি বদলে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ নতুন অ্যাকাউন্টে জমা দিচ্ছে। প্রতি মাসে জইশ অন্তত ৩০টা অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছে। বছরে ৮০ থেকে ৯০ কোটি পাকিস্তানি রুপি সংগ্রহ করছে তারা। উপসাগরীয় দেশ থেকে আসছে বিপুল অর্থ। সংগ্রহ করা অর্থে কেনা হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র, বিলাসবহুল গাড়ি। সেই অর্থে ট্রেনিং ক্যাম্প চালানো হচ্ছে। আর বাকিটা লাগছে মাসুদ আজহারের পরিবারে। বলা ভাল এই Easypay, Sadapay এখন পাকিস্তানের জঙ্গি দলের জন্য অর্থ তোলার অন্যতম মাধ্যম।