জুড়ে গিয়েছে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড মেট্রো। এখন হাওড়া স্টেশন থেকে মেট্রো চড়ে সরাসরি শিয়ালদহে পৌঁছানো যাবে। শিয়ালদহ ও হাওড়ার মতো দুই ব্যস্ত রেলস্টেশনকে জুড়ে দিয়েছে এই মেট্রো পরিষেবা। হাওড়া ময়দান সেক্টর ফাইভ মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি চালু হয়ে যাওয়ায় বাস, অটো, ট্যাক্সির মতো গণপরিবহনে বড় প্রভাব পড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন।
ইতিমধ্যেই হাওড়ার অধিকাংশ যাত্রী শিয়ালদহ যাওয়ার জন্য বাস বা অটোর পরিবর্তে মেট্রোকেই বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। একই কথা বলছেন শিয়ালদহ থেকে হাওড়ায় আসা যাত্রীরাও।
অর্পিতা চৌধুরী নামে এক তরুণী জানিয়েছেন, মেট্রো অনেক স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। মেট্রোয় যাত্রা অনেক নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং ভরসাযোগ্য। মেট্রোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথাও মাতা রাখতে হবে। সর্বোপরি মেট্রোতে যানজট না থাকায় নির্দিষ্ট সময়েই তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। তাই আর বাস বা অটো চেপে শিয়ালদহ যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
আগামী দিনে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো অটো, ট্যাক্সি ও বাসের মতো বিভিন্ন যানবাহনকে যে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চলেছে এই বিষয়ে সকলেই নিশ্চিত। বর্তমানে মহাত্মা গান্ধী রোড দিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪৫০বাস চলাচল করে। এছাড়াও আরও ২৫ টি বাস রুট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অটো এবং ট্যাক্সি। এতদিন এই সমস্ত বাস, ট্যাক্সি ও অটোই ছিল শিয়ালদহ ও হাওড়ার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। যে কারণে হাওড়া- শিয়ালদহ রুটে প্রতিদিন সকাল পাঁচটা থেকে বাস পরিষেবা শুরু হয়ে যেত। যা চলত রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত।
বাস ও অটো চালকরা মেনে নিচ্ছেন, মেট্রো চালু হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই যাত্রীর সংখ্যা কমবে। কারণ শিয়ালদহ যেতে তাঁদের গড়ে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু মেট্রোয় ১০ মিনিটেরও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে।
সাবার্বান বাস সার্ভিসের সভাপতি টিটু সাহা জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহ তাঁরা দেখবেন যাত্রী সংখ্যা কেমন হচ্ছে। তারপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে সমস্ত বাসের যাত্রা শিয়ালদহে শেষ হয় সেগুলির যাত্রাপথ বাড়ানোর চিন্তা চলছে। তবে অনেক বাস মালিক ও সংগঠন এই ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহী নয়। এই মুহূর্তে যে সমস্ত এলাকায় মেট্রো নেই সেখানেই বাস চালানোর উপর জোর দিচ্ছেন তারা। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পুরোপুরি চালু হয়ে যাওয়ায় বাস, ট্যাক্সি, অটোর মত গণপরিবহণ ব্যবস্থার উপর শেষ পেরেক পুঁতে দেওয়া হল বলে অভিযোগ করেছেন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি সুরজিৎ সাহা।
সবমিলিয়ে আমজনতার কাছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো আশীর্বাদ হয়ে উঠলেও বাস, ট্যাক্সি ও অটোর মতো যানবাহনের সঙ্গে যুক্তদের কাছে তা কার্যত উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সঞ্জয় বিশ্বাস নামে এক বাসচালক বলেছেন, বাসযাত্রী যে কমবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কীভাবে তাঁরা বাস চালাবেন সে বিষয়ে ভাবতে হবে। একই ধরনের উদ্বেগ ধরা পড়েছে অটো ও ট্যাক্সিচালকদের গলাতেও।
অটো ইউনিয়নগুলির দাবি, এবার তাঁরা হলুদ ট্যাক্সি চালাতে বাধ্য হবেন। কারণ এই ট্যাক্সিতে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহণ করতে পারবেন তাঁরা।
একই সঙ্গে শিয়ালদহ-হাওড়া রুটের এক অটো চালক জানিয়েছেন, বিকল্প হিসেবে তারা গণেশ টকিজ দিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছেন।