শুক্রবার রাতে ভয়াবহ মেঘভাঙার ঘটনা উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায়। এতে বহু মানুষ নিখোঁজ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হঠাৎ আসা এই দুর্যোগে প্রচুর কাদামাটি ও ধ্বংসাবশেষ ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের উপর আছড়ে পড়ে। জানা গেছে, থারালি বাজার এলাকা এবং থারালি তহসিল কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসাবশেষে ঢেকে যায়। বহু আবাসিক বাড়ি, এসডিএম-এর সরকারি বাসভবন, দোকানপাট ও গাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। নিকটবর্তী সাগওয়ারা গ্রামে এক কিশোরী বাড়ির ভেতর ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্থানীয়রা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। উদ্ধারকাজ চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চেপডন বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত। ভারী বৃষ্টিপাত ও ধ্বংসাবশেষ জমে থাকার কারণে থারালি-গ্বালদাম রাস্তা ও থারালি-সাগওয়ারা রাস্তা বন্ধ। যান চলাচল সম্পূর্ণ ব্যাহত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কিছু ভিডিয়ো।
চামোলি জেলার জেলা শাসক (ডিএম) সন্দীপ তিওয়ারি জানান, “থারালি তহসিলে গতরাতে মেঘভাঙার কারণে বিপুল পরিমাণ কাদামাটি ও ধ্বংসাবশেষ নেমে এসেছে। এতে এসডিএম-এর বাসভবনসহ বহু বাড়িঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ দল গতরাত থেকেই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক বিবেক প্রকাশ জানান, “দুর্যোগস্থলে এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ দল ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। রাস্তাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন। প্রশাসন সক্রিয়ভাবে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এছাড়া আমরা ত্রাণ শিবিরও খুলেছি।”
চামোলি পুলিশ জানিয়েছে, বহু মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, “গতরাতে থারালি থানার এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পুলিশ রাতেই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, স্থানীয় মানুষদের সতর্ক করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়।”
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ঘটনার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “গতরাতে চামোলির থারালি এলাকায় মেঘভাঙার দুঃখজনক খবর পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিয়মিত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সবার নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি।”
উল্লেখ্য, চলতি বর্ষায় উত্তরাখণ্ড জুড়ে প্রবল বৃষ্টি, মেঘভাঙা, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। চলতি মাসের শুরুতেই হরশিল ও ধরালি এলাকায় মেঘভাঙার ফলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়, যাতে বহু মানুষ নিখোঁজ হন এবং প্রচুর পরিকাঠামোগত ক্ষতি হয়।
ভারতীয় আইএমডি ইতিমধ্যেই ২৫শে আগস্ট পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৩ আগস্ট বাগেশ্বর, পিথোরাগড়, নৈনিতাল ও দেরাদুনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২৪ আগস্ট দেরাদুন, টেহরি, উত্তরকাশী, বাগেশ্বর ও পিথোরাগড় জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর ২৫ আগস্ট গড়ওয়াল হিলস, নৈনিতাল, বাগেশ্বর ও পিথোরাগড় জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে।