আইন আছে। সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের তরফে আছে সচেতনতা মূলক প্রচার। তারপরও পণ দেওয়ার মতো মারণ প্রথার কবল থেকে মুক্ত হতে পারছে না এই সমাজ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে পণপ্রথার বলি হয় ১৯ জন মহিলা।
গ্রেটার নয়ডায় নিকি ভাটির খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। গোটা দেশ অভিযুক্ত বিপিন ভাটি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্বতপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করল জাতীয় মহিলা কমিশন।
সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের তরফে পণপ্রথার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে নিয়মিত প্রচার চলছে। কিন্তু তাতেও এই সমাজ থেকে পণপ্রথার মতো একটা ঘৃণ্য ব্যবস্থার শিকড় যে উপড়ে ফেলা যায়নি নিকি ভাটির খুন তারই প্রমাণ। পণ প্রথার ক্ষেত্রে যে একপক্ষ দায়ী তা নয়। কারণ পণ দেওয়া আইন বিরুদ্ধ জেনেও বহু পরিবার বিপুল পরিমাণ যৌতুক দিয়ে থাকে। অন্যদিকে যারা এভাবে যৌতুক আদায় করে থাকেন তাদের লোভের আগুন মেটানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
নিকির বাবা অনুশোচনা করে বলেছেন, মেয়েকে এত বড় স্কুলে লেখাপড়া শিখিয়ে কী লাভ হল! মেয়েকে উপযুক্ত করে তার বিয়ে দেওয়ার পর যদি তাকে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়, তাহলে মেয়েকে মানুষ করে, শিক্ষিত করে কি লাভ?
ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ড বলছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গোটা দেশে ১৯ জন মহিলার মৃত্যু হয়েছে পণজনিত কারণে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে গোটা দেশে কমপক্ষে ৭ হাজার গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে পণজনিত কারণে। এনসিআরবি-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে মহিলা কমিশনের কাছে ২৫ হাজার ৭৪৩ টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। যার মধ্যে ৪৩৮৩টি বা ১৭ শতাংশই ছিল পণপ্রথা সংক্রান্ত ঘটনা। ২৪ শতাংশ (৬২৩৭টি) ঘটনা ছিল গার্হস্থ হিংসার। পণজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ ছিল ২৯২ টি। উত্তর থেকে দক্ষিণ দেশের সর্বত্রই আজও সমাজের গায়ে দগদগে ক্ষতর মতোই রয়ে গিয়েছে পণপ্রথা। পণজনিত কারণে যে নৃশংসভাবে বধূদের খুন করা হয় তা শিউরে ওঠার মতো।
সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে দাবি উঠেছে পণপ্রথা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে আইন আছে তা আরও কঠোর করতে হবে। কারণ বর্তমান আইনে দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে না। সে কারণেই নতুন করে এই ধরনের অপরাধ ঘটছে। পণপ্রথা জনিত ঘটনা সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গোটা দেশে যতগুলি পণজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার ৮০ শতাংশই ঘটেছে এই রাজ্যগুলিতে।
২০১৭-২২ সালের মধ্যে দেশের বড় শহরগুলিতে পণপ্রথা সংক্রান্ত যতগুলি মৃত্যু ঘটেছে তার ৩০ শতাংশ দিল্লিতে। তারপরই রয়েছে কানপুর, বেঙ্গালুরু, লখনউ এবং পাটনা ।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি পণপথা সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়। যার মধ্যে খুব বেশি হলে ১০০ টি মামলায় অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হয়। ৯০ শতাংশেরও বেশি মামলা বিভিন্ন কারণে আদালতে দিনের পর দিন চলতেই থাকে।