নয়ডার বহুল আলোচিত পণ নির্যাতন মামলায় নতুন মোড়। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে নিক্কি ভাটির পরিবার পণ চাওয়ার অভিযোগ তুললেও এবার একই রকম গুরুতর অভিযোগ উঠল নিক্কির নিজের পরিবারের বিরুদ্ধেই। নিক্কির বৌদি তথা ভাই রোহিত পৈল্যার স্ত্রী মীনাক্ষী দাবি করেছেন, তাঁকেও পণের জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
২০১৬ সালে রোহিত পৈল্যার সঙ্গে মীনাক্ষীর বিয়ে হয়। পল্লা গ্রামের বাসিন্দা মীনাক্ষী জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার বিয়েতে একটি মারুতি সুজুকি সিয়াজ গাড়ি পণ হিসেবে দিয়েছিল। কিন্তু পৈল্যা পরিবার গাড়িটিকে “অশুভ” বলে বিক্রি করে দেয়। এরপর তারা নতুন মডেলের স্করপিও গাড়ি ও নগদ টাকা দাবি করে। মীনাক্ষীর পরিবার সেই দাবি পূরণ না করায় তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পরে বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ওঠে। সেখানে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, হয় মীনাক্ষীর পরিবারকে ৩৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে, যাতে মেয়ের অন্যত্র বিয়ে দেওয়া যায়, অথবা তাঁকে আবার বৌমা হিসেবে মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব কোনওদিন মেটেনি। মীনাক্ষীর অভিযোগ, নিক্কির বাবা ভিখারি সিং পৈল্যা ও তাঁর পরিবার কখনও তাঁকে মেনে নেয়নি।
এই প্রসঙ্গে রোহিতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এগুলো শুধুই অভিযোগ।” তবে রোহিতের এক প্রতিবেশী জানান, এই ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বন্দুক বের করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। তিনি পৈল্যা পরিবারকে রক্ষা করে বলেন, “প্রত্যেক ঘরেই ঝগড়া হয়। অন্তত আমরা মেয়েটিকে আগুনে পোড়াইনি।”
অন্যদিকে, নিক্কির শ্বশুর তথা গ্রেফতার হওয়া সতবীর সিং মীনাক্ষীর বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি ভিখারি সিং পৈল্যার সঙ্গে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলবেন। একাধিকবার তিনি মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন বলেও দাবি করা হচ্ছে। এই নতুন তথ্য সামনে আসতেই নিক্কি ভাটির মৃত্যুর তদন্ত আরও জটিল দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে পণ দেওয়া-নেওয়া বেআইনি, তবুও বহুদিন ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে পণকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল।
গত সপ্তাহে ২৮ বছর বয়সী নিক্কি ভাটিকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জীবন্ত পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বহুদিন ধরেই তাঁকে পণ ও গৃহ নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছিল। ভয়াবহ এই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তাঁর সাত বছরের ছেলে এবং তাঁর দিদি কাঞ্চন, যিনি একই পরিবারে বিবাহিত। পরে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নিক্কি মারা যান।
ঘটনার একটি ভিডিয়ো সামনে আসার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়ায়। সেখানে দেখা যায়, আগুনে জ্বলতে থাকা অবস্থায় নিকি সিঁড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করছেন। নিক্কির পরিবারও আগে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে যে তাঁরা পণ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিক্কির বাবা ভিখারি সিং জানান, তিনি দুই জামাইকে একটি স্করপিও গাড়ি, নগদ টাকা এবং সোনার গয়না দিয়েছিলেন। তিনি পণের রীতি সমর্থন করে বলেছিলেন, “আমাদের সমাজে বিয়ে এভাবেই হয়।”
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় মেয়ের উপর নির্যাতন চলছে জেনেও কেন মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেননি, তখন তিনি জানান, “আমাদের সমাজের কথা শুনতেই হয়।” অন্যদিকে নিক্কির কাকা রাজকুমার সিং জানান, বারবার দাবি মেটাতে তারা পণ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, যাতে মেয়ের সংসারে শান্তি বজায় থাকে। কিন্তু পরিণতি হল মৃত্যু!