গান নিয়ে বিতর্কে পাঞ্জাবি গায়ক গুরু রন্ধাওয়া। তাঁর সাম্প্রতিক গান ‘Azul’-এর কারণে বড়সড় বিতর্কে জড়িয়েছেন গায়ক। অভিযোগ উঠেছে, গানটির ভিডিয়োতে তিনি স্কুলছাত্রীদের যৌন আবেদনমূলক ভাবে তুলে ধরেছেন। এই ঘটনার জেরে আদালত তাঁকে সমন পাঠিয়েছে। এখনও পর্যন্ত গুরু রন্ধাওয়া বা তাঁর টিমের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের ৬ আগস্ট প্রকাশিত হয় গুরু রন্ধাওয়ার গান ‘Azul’। গানটিতে তিনি এক ফটোগ্রাফারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি একটি গার্লস স্কুলে ছবি তুলতে যান। অভিযোগ উঠেছে, গানটির ভিডিয়োতে স্কুলপড়ুয়া চরিত্রে অভিনয় করা প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেত্রীদের ‘যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত ও পর্নোগ্রাফিক ফ্যান্টাসি’র মতো দেখানো হয়েছে।
অনেক নেটিজেনের দাবি, এই ভিডিয়োর মাধ্যমে নাবালিকা মেয়েদের যৌন হেনস্তা ও অশ্লীল দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। এক প্রকাশনা সংস্থা ইনস্টাগ্রামে এ নিয়ে পোস্ট করার পর সেটি দ্রুত ভাইরাল হয় এবং বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর সেই পোস্টে ‘লাইক’ দেন। সোনম কাপুরের এই প্রতিক্রিয়ার পর বিতর্ক আরও তীব্র হয়।
ইনস্টাগ্রামে বহু মানুষ মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, “২০২৫ সালেও মানুষ বুঝতে পারছে না, এমন কন্টেন্ট শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর!” আরেকজন লেখেন, “এই ভিডিয়ো ভয়ঙ্কর। কীভাবে এত অনৈতিক জিনিস স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে?” অন্য আরেকজন লেখেন, “সিনেমা ও সংগীত সমাজে পুরুষদের আচরণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। শিল্পীরা শুধু টাকার জন্য এ ধরনের ভিডিয়ো বানান।” যদিও ভিডিয়োতে অভিনয়কারীরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক, কিন্তু তাঁদের স্কুল ইউনিফর্মে ও স্কুল পরিবেশে কিশোরীর মতো উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটাই এখন সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট পাঞ্জাবের নূরপুর, গুরদাসপুরে জন্ম গুরু রন্ধাওয়ার। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে ঝোঁক ছিল, মাত্র সাত বছর বয়সেই স্কুল প্রতিযোগিতা ও স্থানীয় অনুষ্ঠানে গান গাইতে শুরু করেন। পরে দিল্লি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের পর ২০১২ সালে ‘সেম গার্ল’ গান দিয়ে পেশাদার জীবনে পা রাখেন।
২০১৫ সালে বোহেমিয়ার সঙ্গে তাঁর গান ‘পাটোলা’ তাঁকে রাতারাতি খ্যাতি এনে দেয়। এরপর একের পর এক জনপ্রিয় গান যেমন ‘লাহোর’, ‘হাই রেটেড গাবরু’, ও ‘সলোয়লি সলোয়ি’ তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি দেয়। ‘লাহোর’ গানটি বিলবোর্ডের টপ ২৫ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল।
বলিউডেও তিনি একাধিক হিট গান উপহার দিয়েছেন, তালিকায় রয়েছে “হিন্দি মিডিয়াম” ছবির গান। পাশাপাশি প্রযোজনা করেছেন পাঞ্জাবি ছবি “তারা মিরা”। গত কয়েক বছরে তিনি একাধিক পুরস্কার জিতেছেন এবং বর্তমানে তাঁর ইনস্টাগ্রামে ৩৪ মিলিয়নের বেশি অনুসারী রয়েছে। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ আনুমানিক ১১.৮ মিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালে তিনি “উইদাউট প্রেজুডিস” নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন, যাতে ‘কাতাল’, ‘ভাইব’ সহ বেশ কিছু গান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর প্রকাশিত গানগুলির মধ্যে আছে – আজুল (২০২৫), কাতাল, ফ্রম এজেস, সিরা, ভাইব, শের তে শিকার, গাল্লান বাত্তান, স্ন্যাপব্যাক, নিউ এজ, জানেমান, সারি কানেকশন সহ আরো অনেক কিছু।
তিনি শুধু গায়কই নন, বরং সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও পরিচিত। একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় ও সামাজিক ইস্যুতেও তিনি খোলাখুলি মতামত দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি পাঞ্জাব সরকারের স্কুলে পাঞ্জাবি ভাষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তবে জুন ২০২৫-এ তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন। বর্তমানে আবারও তিনি বিতর্কের কেন্দ্রে।
বিতর্কের মাঝেই গুরু রন্ধাওয়া তাঁর “Azul” গানটির সাফল্যের পোস্ট শেয়ার করেন। ৯ আগস্ট তিনি ভিডিয়োর প্রধান নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে ছবি দেন। ছবিটি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া লাইক করেন। পরে গানটির শুটিংয়ের একটি ক্লিপ শেয়ার করলে সেটি বরুণ ধাওয়ান ও ম্রুণাল ঠাকুর লাইক করেন। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো পুরো ভিডিয়োটি দেখেননি, শুধু পোস্টে লাইক দিয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত এই বিতর্কে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি গুরু রন্ধাওয়া। তবে তিনি বারবার গানটির জনপ্রিয়তা ও ট্রেন্ডিং হওয়ার বিষয়ে ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর ইনস্টাগ্রামে বর্তমানে কমেন্টস লিমিটেড করে দেওয়া হয়েছে। আদালতের সমন নিয়ে এখনো কোনো সরকারি বিবৃতি না এলেও গুরু রন্ধাওয়ার এই বিতর্কিত ভিডিয়ো। তাঁকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে।