সমস্ত অবৈধ নির্মাণ ক্ষেত্রে আইন মোতাবেক কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। মেসার্স টি এস কনস্ট্রাকশন বনাম হাওড়া জেলা পরিষদের মামলায় সোমবার এই রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, বৃহত্তর জনস্বার্থে কলকাতা ও হাওড়ার সমস্ত অবৈধ নির্মাণেই এটি প্রয়োগ হবে।
শীর্ষ আদলতের বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জোর দিয়ে বলেছে, অবৈধ নির্মাণ নগর পরিকল্পনা, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “কলকাতা হাইকোর্ট বৃহত্তর জনস্বার্থে এই বিষয়টি গ্রহণ করবে এবং নিশ্চিত করবে যে কলকাতার শহর জুড়ে প্রতিটি অননুমোদিত নির্মাণে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ করবে”।
প্রসঙ্গত, হাওড়া জেলা পরিষদ, আবেদনকারী মেসার্স টি এস কনস্ট্রাকশনের এক অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছিল। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে নির্মাণ কালে বিচ্যুতিগুলি “জ্ঞাতসারে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে” করা হয়েছে। আবেদনকারীর যুক্তি ছিল তাদের নির্মাণটি হাওড়া জেলা পরিষদ উপ-আইনে সুরক্ষিত। মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে এলে গত বছর নভেম্বরে আবেদনকারীর রিট আপিল খারিজ করে এবং অভিযোগকারী হাওড়া জেলা পরিষদের পক্ষেই রায় দেয়।
সোমাবার সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের সেই রায়ই বহাল রাখে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কলকাতা হাইকোর্ট যথাযথভাবে উপ-আইন প্রয়োগ করেছে এবং অননুমোদিত নির্মাণের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করেছে। “শহরজুড়ে এই ধরনের অননুমোদিত নির্মাণের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেখানো উদ্বেগের আমরা প্রশংসা করি।” মন্তব্য শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের।
ডিভিশন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, অবৈধ নির্মাণের সমস্যাটি কেবল কেস-বাই-কেস নয়, একটি পদ্ধতিগত স্তরেও সমাধান করা উচিত। অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ নির্মাণ আইনের শাসনকে যেমন নষ্ট করে, তেমনি জননিরাপত্তাকেও বিপন্ন করে তোলে।
কলকাতায় অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ করার ঘটনা কিন্তু এই প্রথম নয়। ২০২৪ সালের মে মাসে, বিচারপতি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ কলকাতায় একটি অবৈধ ভবন নিয়মিতকরণের আবেদন খারিজ করেছিল, রায় দিয়েছিল যে লঙ্ঘনকারীদের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখানো উচিত নয়। আদালত জোর দিয়ে বলেছিল, অবৈধ কাঠামোগুলি ভেঙে ফেলা উচিত।
২০২৪ সালে গার্ডেনরিচে একটি অননুমোদিত নির্মাণ তৈরির সময় ভেঙে যাওয়ায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাইকোর্ট সেই সময় কলকাতা পুরসভাকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি, অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা এবং শহর জুড়ে অবৈধ কাঠামো সনাক্ত এবং ভেঙে ফেলার জন্য কলকাতা পুলিশের সঙ্গে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করার কথা বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা হাইকোর্টের সেই সমস্ত নির্দেশের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা এদিনও পুনর্ব্যক্ত করেছে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়, শহরজুড়ে অবৈধ নির্মাণ ও নির্মাণকারীদের কড়া বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।