বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে এনডিএ জোটে অস্থিরতা চরমে। বিজেপি ও জেডিইউ-কে ঘিরে থাকা ছোট মিত্র দল- চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) ও জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) আর সহ-অভিনেতা হতে রাজি নয়। তারা আসন ভাগে বড় অংশ চাইছে, নইলে একক লড়াইয়ের হুমকি দিচ্ছে।
দলিত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের পুত্র চিরাগ পাসওয়ান ২০২৪ লোকসভায় পাঁচটি আসন জিতে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। এবার তিনি ২৪৩ আসনের মধ্যে ৪০টি দাবি করেছেন। হুমকি দিয়েছেন, দাবি না মানলে সব আসনে প্রার্থী দেবেন। হাজিপুরে, বাবার ঘাঁটিতে, চিরাগের কণ্ঠ এখন একক নেতৃত্বের আভাস দিচ্ছে।
৭৯ বছরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি ২০২৪-এ গয়া থেকে জয় পেয়ে ফের আলোচনায়। তাঁর দল হিন্দুস্থানী আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) মহাদলিতদের প্রতিনিধি। মাঝি দাবি তুলেছেন গয়া ও ঔরঙ্গাবাদ জেলার সব আসনে তাঁর দলের প্রার্থী চাই। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক জানেন, এনডিএ’র জাতিগত সমীকরণে তাঁর উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিজেপি ও জেডিইউ দীর্ঘদিন ধরে বিহারের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হলেও ভেতরে ভেতরে দুর্বলতা স্পষ্ট। ২০২০ সালে এনডিএ ১২৫টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি ৭৪, জেডিইউ ৪৩। তখন চিরাগ পাসওয়ান জেডিইউ-র বিরুদ্ধে লড়ে ভোট কাটলেও আসন পায় মাত্র একটি। কিন্তু ২০২৪ লোকসভায় এনডিএ মোট ৩০ আসন পায় (বিজেপি ১২, জেডিইউ ১২, এলজেপি ৫, হাম ১)। ফলে ছোট শরিকদের গুরুত্ব আবারও বেড়েছে।
আলোচনায় শোনা যাচ্ছে – জেডিইউ ১০২, বিজেপি ১০১, এলজেপি ২০, হাম ১০, আরএলএম ১০ আসনে লড়বে। কিন্তু চিরাগের ৪০ আসনের দাবি আর মাঝির গয়া-ঔরঙ্গাবাদ দখলের জেদে সমঝোতা জটিল হচ্ছে। বিজেপি বেশি ছাড় দিলে ক্ষুব্ধ হবে জেডিইউ, আবার অনড় থাকলে চিরাগের দলিত ভোট হারানোর ভয়। এতে লাভবান হতে পারে আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন, যারা ইতিমধ্যেই মুসলিম-যাদব ও অন্য পশ্চাদপদ ভোট ধরে রেখেছে।
এনডিএ-র ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মিত্রদের দাবিকে কীভাবে সামলানো হয় তার ওপর। চিরাগের সমস্ত আসনে লড়ার হুমকি হতে পারে দর-কষাকষির অস্ত্র, তবে ঝুঁকিও কম নয়। মাঝির আসন দাবিও সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে। বিজেপি ও জেডিইউ যদি একসঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তাহলে এনডিএ আবারও জয় পেতে পারে। না হলে শরিকদের অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষেই ভেঙে যেতে পারে জোটের সুর।