পাকিস্তানকে সামনে রেখে প্রভাব বিস্তারের আগ্রাসন জারি রেখেছে আমেরিকা ও চিন। অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কোণঠাসা রাষ্ট্রকে ঘিরে স্নায়ুযুদ্ধও জারি বিশ্বের অন্যতম দুই বৃহত রাষ্ট্রের। একদিকে চিন যখন পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডরের দ্বিতীয় পর্যায়ের (CPEC ২) সূচনা করছে, তখন নূর খান বিমানঘাঁটিতে সামরিক বিমান নামিয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিলি বন্টনে ব্যস্ত মর্কিন বিমানবাহিনী। বেজিং-ওয়াশিংটন ডিসি-র যাবতীয় কার্যকলাপে নজরদারি চালাচ্ছে উদ্বিগ্ন ভারত।
চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (CPEC) ২ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে আফগানিস্তানও। সিপিইসির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে রয়েছে শিল্পায়ন, খনিজ সম্পদের উত্তোলন, রফতানি, কৃষি এবং প্রযুক্তি। ইসলামাবাদের প্রতিটি প্রদেশে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ বা এসইজ়েড তৈরির পরিকল্পনা ছকেছে বেজিং। সেখানে শাহবাজ সরকারকে চিনা সংস্থাগুলিকে উৎপাদন করার জন্য ছাড়পত্র দিতে হবে।
CPEC ২-তে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের রাজধানী করাচি থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ার পর্যন্ত রেলপথ বিস্তারের কাজ করবে চিন। পাশাপাশি, বালোচিস্তানের গ্বদরে গভীর সমুদ্র বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির কাজও তাদের করার কথা। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের বালোচিস্তান প্রদেশে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্ব পেতেও আগ্রহী বেজিং।
এদিকে পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ নিয়ে প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে মার্কিন মুলুকও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জুলাইয়ে ইসলামাবাদের ‘বিশালা তৈলভান্ডার’ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন। আবার মার্কিন সংবাদ মাধ্যম লিখেছে, তেলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি আগ্রহ বালোচিস্তানের বিরল খনিজ ভাণ্ডারের উপর।
বালোচিস্তানের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ঘিরে দানা বেঁধেছে ক্ষোভও। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের প্রদেশে জারি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ। এই পরিস্থিতিতে বালোচিস্তানের খনিজ সম্পদের দখলকে কেন্দ্র করে অচিরেই পাকিস্তানের ভিতরে আরও একটি লড়াই শুরু হওয়ার আশঙ্কা। যেখানে মুখোমুখি হবে আমেরিকা ও চিন।
বালোচিস্তান ঘিরে চিন এবং মার্কিন মুলুকের এমন দড়ি টানাটানির উপর নজর রাখছে উদ্বিগ্ন ভারত। কারণ একদিক থেকে পাকিস্তানকে বুড়ি করে চিন যেমন ভারতকে ঘেরার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি ট্রাম্প প্রশাসনও সরাসরি পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে দহরম মহরম বাড়িয়েছে। খনিজ সম্পদ উত্তোলন সংক্রান্ত চুক্তিটি করা হয়েছে পাক সেনাবাহিনী পরিচালিত ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের সঙ্গে।
অপারেশন সিন্দুরে বিধ্বস্ত পাক সেনাবাহিনীর বিমানঘাঁটি নূর খান বিমানবন্দরেই বন্যার ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নেমেছে মার্কিন সামরিক বিমানগুলি। রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এটির মাধ্যমেও একটি বার্তা দিয়েছে শাহবাজ সরকার। জানানো হয়েছে, নূর খান বিমানবন্দরে সংস্কারের কাজের সময় হাজির মার্কিন সেনা। ভারত যেন এই ঘাঁটিতে আর নজর না দেয়।
ফলে একদিকে CPEC ২-র নাম করে চিনের আরও নজরদারি আর অন্যদিকে ট্রাম্পের ছাড়পত্রে মার্কিন সেনাদের নূর খান বিমানঘাঁটিতে অবতরণ, জোড়া পদক্ষেপকে সামাল দিতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। স্বভাবতই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঘিরেও বেড়েছে ঝুঁকি।