বলিউডে প্রথম সারির অভিনেতা হওয়া মোটেও সহজ কাজ নয় আর বিশেষ করে কেউ যদি নন ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে। কিন্তু সেরকমই এক জায়গা থেকে এসে বলিউডে শুধু নিজের জায়গাটাই শক্ত করেননি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন আপামর ভারতবাসীর। কি এতটা পরে নিশ্চয়ই সেই অভিনেতার নাম জানতে ইচ্ছে করছে? তিনি আয়ুষ্মান খুরানা।
শুরুর সেসব দিন
আয়ুষ্মান-এর জন্ম চন্ডীগড়ে, বাবা জ্যোতিষী আর মা গৃহবধূ । স্কুল-কলেজের পাঠ চন্ডীগড়ে। স্কুলে পড়াকালীন আয়ুষ্মান নাটকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং স্কুলের অনেক নাটকে অভিনয় করেন। এমনকী কলেজে পড়ার সময় তৈরি করেছিলেন নিজের একটি নাটকের গ্রুপ। সেই গ্রুপের অস্তিত্ব কিন্তু আজও টিকে আছে । যারা আয়ুষ্মানের ফ্যান তারা সকলেই জানেন আয়ুষ্মান খুব ভালো গান করেন , বলিউডের বেশ কিছু গান তিনি গেয়েছেন, যার মধ্যে ‘পানি দা’ রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করেছিল। আবার একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক।কলেজে পড়তে পড়তেই নিজের পকেট মানি তোলার জন্য তিনি ট্রেনে বন্ধুদের সঙ্গে গান গেয়ে বেড়াতেন । তখন একটা ট্রেন ছিল। পশ্চিম এক্সপ্রেস। দিল্লি থেকে মুম্বই যেত। সেই ট্রেনের এক কামরা থেকে আরেক কামরায় ঘুরে ঘুরে গান করত আয়ুষ্মান আর তাঁর বন্ধুরা আর যা টাকা পয়সা পেতেন তা দিয়ে চলত তাদের শো। তাই আজও নিজেকে অনায়াসে তিনি ট্রেনের সিঙ্গার বলতে পারেন।
একটা ইন্টারভিউতে আয়ুষ্মান জানিয়েছিলেন ট্রেনে গান করে এতটাই রোজগার হয়েছিল যে বন্ধুদের সঙ্গে গোয়া ট্রিপ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল ।
ব্যক্তিগত বৃত্তে
এবার একটু নজর দেওয়া যাক আয়ুষ্মানের ব্যক্তিগত জীবনে। বাবা ছিলেন খুবই শক্ত মানুষ তবে মা সমস্ত স্নেহ উজাড় করে দিতেন ছেলের প্রতি। আয়ুষ্মানের বয়স যখন কুড়ির কোঠায় একদিন সিগারেট খাওয়ার জন্য বাবার কাছে মার খেয়েছিলেন। পরে যতবার সিগারেট হাতে নিয়েছেন বাবার ওই মারের কথা মনে পড়েছে। আর কখনই তিনি সেটা খেতে পারেননি, আয়ুষ্মান বলিউডে এসে চুটিয়ে প্রেম করেছিলেন পরিচালক তাহিরা কাশ্যপের সঙ্গে তাহিরাকে বিয়ে করেন খুব কম বয়সেই আর কুড়ির কোঠাতেই হয়ে যান এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের পিতা ।আয়ুষ্মানের ভাষায় কন্যা সন্তানের বাবা হওয়া তাঁকে নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছে ।
তবে আয়ুষ্মান বলেন তার বাবা যতটা কড়া ছিলেন তিনি নিজে কিন্তু ততটা কড়া বাবা না বরং মেয়ের প্রতি একটু লিবারেল তিনি। তিনি জানান ছোটবেলায় বাবার হাতে মার খাওয়া, জুতোর বারি খাওয়া এগুলি একটা সময় তাঁর কাছে ট্রমার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল তাই সেই দিনগুলোকে তিনি ভুলতে চান আর সেজন্যই মেয়েকে সম্পূর্ণ অন্যভাবে মানুষ করতে চান আয়ুষ্মান-তাহিরা। আয়ুষ্মান জানান একদিন পার্টি থেকে ফেরার পর তার শার্ট থেকে সিগারেটের গন্ধ বেরোচ্ছিল ব্যস ওই দিনের পর থেকেই তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেন কারণ যতবারই তিনি সিগারেট লাইটার ধরাতে যান না কেন বারবার মনে পড়ে বাবার সেই রাগী মুখটার কথা।
কেরিয়ার
কলেজ পাশ করার পর আয়ুষ্মান একটি চ্যানেলে সঞ্চালনার সুযোগ পান আর সেখানেই তাঁর আলাপ হয় পরিচালক প্রযোজক করন জোহরের সঙ্গে । সুযোগটাকে কাজে লাগানোর প্রবল চেষ্টা করেন চন্ডীগড় বয়। তিনি যে বলিউডে আসতে উৎসাহী সেটা তিনি করনকে জানান এমনকী করনের নম্বরও তিনি নিয়ে নেন । কিন্তু পরে যখন ওই নম্বরে তিনি ফোন করেন তখন ওপাশ থেকে একটি ফ্যাসফ্যাসে পুরুষকণ্ঠ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমরা বহিরাগত কাউকে অডিশনের সুযোগ দিই না। কফি উইথ করনের সিজন সিক্স-এ এসে আয়ুষ্মান এই ঘটনাটির উল্লেখ করেছিলেন।
বলিউডে জয়যাত্রা
তারপরে একদিন বলিউডে নিজের জায়গাটা আস্তে আস্তে পাকা করে নেন আয়ুষ্মান। পরিচালক সুজিত সরকার ও প্রযোজক জন আব্রাহাম তাদের পরবর্তী ছবি ভিকি ডোনারের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন আর আয়ুষ্মান- এর কাজ দেখে তাঁদের বেশ ভালো লেগেছিল। আয়ুষ্মানকে বলতেই এক কথায় রাজি ।ততদিনে তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে এক মেয়ের বাবাও তিনি। তবে শুক্রাণু দাতার চরিত্রে প্রথম ছবিতে অভিনয় করা একটু ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। আর সেই ঝুঁকিটা তিনি নিয়েছিলেন বলেই আজ ভিকি ডোনার বললে সবাই এক বাক্যে আয়ুষ্মানের নামটাই বলবে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আয়ুষ্মানকে। বাধাই হো, মেরে পেয়ারি বিন্দু , আর্টিকেল ১৫ , শুভ মঙ্গল সাবধান, দম লাগাকে হেইসা , ড্রিম গার্ল , বালা–একের পর এক হিট ছবি তিনি দিয়ে গেছেন বলিউডকে আর তাই নন ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও তার স্বতন্ত্র জায়গা তিনি বলিউডে করে নিতে পেরেছেন।
ভার্টিগোর সমস্যা
আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে আয়ুষ্মানের ভার্টিগো ধরা পড়ে। তখন অনেক কিছুতেই বিধি-নিষেধ ছিল। তবে ধীরে ধীরে ওষুধ খেয়ে আর মেডিটেশন-এর মাধ্যমে আয়ুষ্মান স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। চরিত্র নিয়ে বরাবরই এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসেন আয়ুষ্মান। সেরকমই একটি নতুন ছবিতে পুরোদস্তুর অ্যাকশন হিরো ছবিতে কাজ করতে শুরু করেছিলেন আয়ুষ্মান। ছবির নাম ছিল দ্য অ্যাকশন হিরো কিন্তু সেখানে অনেকটা উপর থেকে লাফ দিয়ে জাম্পিং-এর সিন ছিল। ভার্টিগোর ফলে আয়ুষ্মানের পক্ষে সিনটি করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। তবে ভার্টিগোর সমস্যা পিছিয়ে রাখতে পারেনি এই অভিনেতাকে , নিয়মিত মেডিটেশন করে জয় করে নিয়েছেন রোগটিকে। হ্যাঁ মাঝে মাঝে ফিরে আসে তবে কখনই তাঁকে কাবু করতে পারে না আর ভার্টিগো কেন কোন কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না কারণ তিনি যে আয়ুষ্মান খুরানা ট্রেন সিঙ্গার থেকে বলিউড সুপারস্টার–এরকম জার্নি কজনের হয়।