দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি
মহালয়া দোরগোড়ায়। তারপরই শুরু হয়ে যাবে দেবীপক্ষ। হুগলির চুঁচুড়া থেকে শুরু করে শ্রীরামপুর, ডানকুনি সর্বত্র শিল্পীদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। আর তারই মাঝে এবারের পুজোয় কারিগরের সমস্যা প্রথমে প্রতিমা শিল্পীদের চিন্তায় ফেললেও সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠে এখন শিল্পীদের পালে খুশির হাওয়া। ডানকুনি রঘুনাথপুর ময়রাপাড়ার পিন্টু হাজরা সহ আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দুর্গার বাজার অনেক ভাল। তার প্রধান কারণ হিসেবে তারা বিশ্বকর্মা পুজো ও দুর্গা পুজোর মাঝে সময়ের ব্যবধান কম থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
ডানকুনি ময়রাপাড়ার প্রতিমা শিল্পী পিন্টু হাজরা জানিয়েছেন, কোভিডের সময় দুর্গার বাজার খারাপ থাকায় তারা প্রবল আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলেন। সেই সংকট কাটিয়ে যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছিল ঠিক তখনই এ বছর পুজোয় কারিগরের সমস্যা বড় হয়ে দেখা দেয়। এ বছরের পুজোয় শুধু হুগলি নয়, সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বহু প্রতিমা শিল্পী গণেশ পুজোর সময় থেকেই মহারাষ্ট্র, সুরাত, ভোপাল, বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছেন। তার নিজেরই চার জন কারিগর ভিন রাজ্যে প্রতিমা গড়ার অর্ডার নিয়ে চলে গেছেন। ভিন রাজ্যে প্রতিমা গড়ার কাজ নিয়ে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল সেখানে পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক গুণ বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে একটা ৫ ফুটের দুর্গা প্রতিমায় গড়ে কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার টাকা পাওয়া যায় সেখানে ভিন রাজ্যে ওই উচ্চতার একটি দুর্গা প্রতিমার মূল্য এক লক্ষ টাকা। তাই বেশি উপার্জনের আশায় বহু প্রতিমা শিল্পী চলতি বছরে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। আর তখন থেকেই তাদের প্রতিমা গড়া নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু হাতে সময় থাকতে থাকতেই বহু প্রতিমা শিল্পী তখন থেকেই গণেশ, বিশ্বকর্মা ও দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজে উঠে পড়ে লাগেন। আর এই কাজে তাদের সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করেন তাদের স্ত্রী, ছেলে মেয়েরা। তার উপর এ বছর বিশ্বকর্মা পুজো ও দুর্গা পুজোর মাঝে ব্যবধান কম থাকায় দুর্গার বাজার অনেকটাই ঊর্ধ্বগামী। সেইমতো অর্ডারও আসে অনেক বেশি। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী বহু শিল্পী হিসেব করে দুর্গার অর্ডার নিয়েছেন। এতে তাদের ঘরে অন্যান্য বারের মতো প্রতিমা পড়ে থাকবে না।
পাশাপাশি কারিগরের সমস্যা থাকার দরুন শিল্পীরা নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কোনও দুর্গার অর্ডার নেননি। তারা অনেকেই অর্ডার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর তারা যে সমস্ত অর্ডার ফিরিয়েছে, সেই সমস্ত অর্ডার পেয়েছেন বিভিন্ন এলাকার ছোটখাটো শিল্পীরা। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে থাকা বহু শিল্পীর মুখে হাসি ফুটেছে কারণ এই প্রথম তারাও কমবেশি বেশ কিছু দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেয়েছেন। পিন্টু হাজরা জানিয়েছেন, এ বছর তিনি ১২০ টি বিশ্বকর্মা ঠাকুর বানানোর পাশাপাশি ২২ টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন। এছাড়া ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০ টি কালী ঠাকুর গড়ার অর্ডারও পেয়েছেন। এছাড়া আশেপাশের সমস্ত শিল্পী পুজোর সময় প্রতিমা গড়ার অর্ডার পাওয়ায় তিনি নিজেও খুশি। তিনি জানান, উৎসব সকলের কাছে আনন্দের। পাশের বাড়ির মানুষ যদি আনন্দে না থাকেন তবে নিজেদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।