দিল্লি হাইকোর্টে দাখিল করা এক হলফনামায় কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ইয়াসিন মালিক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈবা প্রধান ও ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ছিল ভারতের গোপন শান্তি প্রচেষ্টারই অংশ, এবং বৈঠকের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
হলফনামায় মালিক উল্লেখ করেছেন, ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে দিল্লিতে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর স্পেশাল ডিরেক্টর ভি.কে.জোশি তাঁকে অনুরোধ করেন যেন তিনি পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। সেই কারণেই তিনি হাফিজ সাঈদ ও ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিলের অন্যান্য নেতার সঙ্গে দেখা করেন।
মালিক দাবি করেছেন, সাঈদ এক অনুষ্ঠানে জঙ্গি সংগঠনগুলিকে একত্রিত করেন, যেখানে মালিক বক্তৃতা দিয়ে শান্তির আহ্বান জানান। তিনি ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যদি কেউ তোমাকে শান্তির প্রস্তাব দেয়, তবে সেটিকে গ্রহণ করো।”
তবে বছর কয়েক পর এই বৈঠককে তাঁর পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসূত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। মালিকের অভিযোগ, এটি ছিল সরকারের অনুমোদিত উদ্যোগ, কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
মালিকের সবচেয়ে বিস্ফোরক দাবি হল, ভারতে ফিরে আইবি-র কাছে সবকিছু জানানোর পর তাঁকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে বলা হয়। সেই সন্ধ্যাতেই মালিকের সঙ্গে মনমোহন সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম.কে. নারায়ণনের বৈঠক হয়। মালিকের দাবি, সিং তাঁকে ধৈর্য, প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
মালিক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং কোনো দ্বিধা ছাড়াই আমাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে কাশ্মীরে অহিংস আন্দোলনের জনক মনে করি।”
হলফনামায় মালিক আরও জানান, ভি.পি.সিং থেকে শুরু করে চন্দ্রশেখর, নরসিমা রাও, দেবেগৌড়া, আই.কে.গুজরাল, অটল বিহারী বাজপেয়ী থেকে মনমোহন সিং—ক্রমাগত ছয়টি সরকার তাঁকে আলোচনায় যুক্ত করেছিল এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চেও কাশ্মীর প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করেছিল।
ইয়াসিন মালিকের এই দাবি প্রকাশ্যে আশায় বড় ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হতে পারে। কারণ বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি হাফিজ সাঈদের সঙ্গে বৈঠকের পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন—এমন দাবি অভূতপূর্ব।
উল্লেখ্য, ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালে শ্রীনগরে চারজন ভারতীয় বায়ুসেনা কর্মকর্তাকে হত্যা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সাঈদের কন্যা রুবিয়া সাঈদকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ও তাঁকেই ১৯৯০-এর দশকে নির্বাসন ও জাতিগত নিধনের জন্য দায়ী করে আসছে।
মালিকের এই হলফনামা গোয়েন্দা কৌশল ও শান্তিপ্রক্রিয়ার ওপর আঙ্গুল তোলার পাশাপাশি সরাসরি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে এনে দিয়েছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
